ভাইরাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব | Economic Importance of Virus

নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ভাইরাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

www.bigyanbook.co.in


ভাইরাস উপকারী এবং অপকারী উভয় ভূমিকাতেই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাস যেমন একদিক থেকে আমাদের অপকার করে থাকে ঠিক তেমনি এর কিছু উপকারী ভূমিকাও দেখা যায়। প্রথমে দেখবো বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী ভাইরাসের অপকারী ভূমিকা এবং তারপর ভাইরাসের উপকারী ভূমিকা।


• ভাইরাসের অপকারী ভূমিকা (Harmful roles)

ভাইরাস হলো বাধ্যতামূলক পরজীবী বা অবলিগেট প্যারাসাইট (Obligate parasite) যার জন্যে ভাইরাস উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে বিভিন্ন প্রকারের রোগের সৃষ্টি করে।


১) উদ্ভিদ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস :

           a) টোব্যাকো মোজাইক ভাইরাস (Tobacco mosaic virus বা TMV) :

           টোব্যাকো মোজাইক ভাইরাস তামাক পাতায় মোজাইক রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগের ফলে ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে যায় এবং পাতায় হালকা ও গাঢ় সবুজ বর্ণের ছোপ বা দাগ দেখা যায়।

           b) আলুর লিফ্ রোল ভাইরাস (Potato leaf roll virus বা LRV) :

           আলুগাছ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছের পাতাগুলি কিনারা বরাবর গুটিয়ে যায়।

           c) টম্যাটো ও টোব্যাকোর পত্র কুঞ্চনকারী ভাইরাস (Leaf Curl virus of tamato and tobacco) :

           এই ভাইরাসঘটিত রোগের ফলে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায়, শিরার অঞ্চলে ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে যায় এবং পাতা কুঞ্চিত হয়ে যায়।

           d) কলার ভাইরাস (Banana virus I ও Musa virus I) :

           এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, গাছ খর্বাকার হয়, গাছের পাতা উপরের দিকে গুটিয়ে যায়।

           e) টুংরো ভাইরাস (Tungro virus) :

           ধানগাছ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে ধানগাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পাতা বর্ণহীন এবং পচনশীল প্রকৃতির হয়। এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে ধানের শীষগুলি ছোটো ও কম এবং হালকা দানাযুক্ত হয়। ধানের টুংরো ব্যাসিলিফর্ম ভাইরাস (RTBV) এবং টুংরো স্ফেরিকাল ভাইরাস (RTSV) এই রোগলক্ষণ সৃষ্টি করে।


২) প্রাণী এবং মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস :

অ্যাডিনো ভাইরাস সর্দিজ্বর সৃষ্টি করে, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ফ্লু সৃষ্টি করে, পক্সভিরিডি বা পক্স ভাইরাস বসন্তরোগ সৃষ্টি করে,হরপিসভিরিডি (HHV-1 ও HHV-2) মানুষের হারপিস রোগ সৃষ্টি করে, হেপাডনাভিরিডি বা হেপাটাইটিস ভাইরাস যকৃতের রোগ সৃষ্টি করে যা হেপাটাইটিস নামে পরিচিত। এছাড়াও HIV-1, HIV-2 (Human Immuno Deficiency Virus) ভাইরাস AIDS (Acquired Immuno Deficiency Syndrome) নামক প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করে।


৩) ভাইরাস ও ক্যানসার :

যে বিশেষ ভাইরাস ক্যানসার রোগ সৃষ্টি করে তাদের অঙ্কোভাইরাস (Oncovirus) বলে। ক্যানসার রোগসংক্রান্ত বিদ্যাকে অঙ্কোলজি (Oncology) বলে। HPV-16 (Human papilloma virus) ভাইরাস সারভাইকাল ক্যানসার সৃষ্টি করে, HTLV-1, HTLV-2 (Human T Cell leukaemia virus) ভাইরাস লিউকেমিয়া ও লিম্ফোমাজাতীয় ক্যানসার সৃষ্টি করে।



• ভাইরাসের উপকারী ভূমিকা (Beneficial roles)

১) জিনগত গবেষণা :

ভাইরাস জিনোম হলো জিনগত গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ফাজ ভাইরাস ট্রান্সডাকশন (transduction) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ায় নতুন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায়।


২) ভ্যাকসিন উৎপাদন :

বিভিন্ন ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় (attenuated) করে ভ্যাকসিন হিসেবে মানবদেহে প্রবেশ করনো হয়। এই ভ্যাকসিন রক্তে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে এবং ভিরুলেন্ট বা রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি (immunity) প্রদান করে। জলাতঙ্ক, গুটি বসন্ত, পোলিও প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (immunity) সৃষ্টি করা হয়।


৩) ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ দমন :

সুনির্দিষ্ট ফাজ ভাইরাস ব্যবহার করে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা যায়।


৪) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering) :

আকাঙ্ক্ষিত জিন বা DNA -এর খন্ড তুলনামূলকভাবে ছোটো হলে, ফাজ ভাইরাসের DNA -এর সঙ্গে ওই DNA খন্ডকে যুক্ত করে ব্যাকটেরিয়াতে প্রবেশ করানো হয়। এই ক্ষেত্রে ফাজ ভাইরাস জিন বহনকারী কণা বা ভেক্টর (vector) হিসেবে কাজ করে।


৫) পতঙ্গনাশক ভাইরাস :

আলফা আলফা ক্যাটারপিলার NPV, ক্যাবেজ ওয়ার্ম GIV প্রভৃতি ভাইরাসগুলি পতঙ্গ ও তাদের শুককীট ও মুককীট দমনে প্রয়োগ করা হয়। ভাইরন H, VTN, বায়োট্রল প্রভৃতি হলো কীটনাশক বা পতঙ্গনাশক ভাইরাসের বাণিজ্যিক নাম।


» পান বিজ্ঞানবুকের সমস্ত আপডেটস সরাসরি আপনার ইমেলে। নীচে আপনার ইমেল দিয়ে বিনামূল্যে সাবস্ক্রাইব করুন।

» সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞানবুক ইউটিউবে। লাইক, ফলো করুন বিজ্ঞানবুক ফেসবুক, টুইটারে।

» শেয়ার করুন বিজ্ঞানবুকের আর্টিকেলগুলি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে।

» কোনো প্রশ্ন থাকলে, বা কোনো মতামত কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।

» পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।

» আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।।

Bigyanbook

Share your feedback! Share this post! Explore all posts. Thanks for reading. facebook youtube whatsapp email

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন