নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন

নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো নিয়মিত প্রতিফলন এবং বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

www.bigyanbook.co.in


শুরুর আগে আমরা প্রথমেই আলোর প্রতিফলন সম্পর্কে একটু জেনে নেবো।

আলোর প্রতিফলন কাকে বলে?

আলো যখন কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে অন্য কোনো মাধ্যমের ওপরিতলে আপতিত হয় তখন সেই আপতিত আলোর কিছু অংশ অভিমুখ পরিবর্তন করে প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে, এই ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে।

প্রতিফলক কাকে বলে ?

যে তল থেকে আলোর প্রতিফলন হয় তাকে প্রতিফলক বলা হয়।


নিয়মিত প্রতিফলন কাকে বলে?

সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ যদি কোনো মসৃণ সামতলিক প্রতিফলকে আপতিত হয়ে সমান্তরাল রশিগুচ্ছ রূপেই প্রতিফলিত হয়, তবে আলোর এরূপ প্রতিফলনকে নিয়মিত প্রতিফলন বলা হয়।


দর্পণ, স্থির জলের উপরিতল, মসৃণ ধাতব তল প্রভৃতিতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

www.bigyanbook.co.in


মসৃণ সমতলের ক্ষেত্রে রশ্মি গুলির আপতন বিন্দুতে প্রতিফলক তলের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব গুলি পরস্পরের সমান্তরাল হয়। সেই জন্য নিয়মিত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে আপতিত রশ্মি গুলি পরস্পরের সমান্তরাল হলে প্রতিফলিত রশ্মি গুলিও পরস্পরের সমান্তরাল হয়। নিয়মিত প্রতিফলন হলেই বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। তাই সমতল দর্পণে নিয়মিত প্রতিফলনের ফলেই আমরা আমাদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই।


মনে করা যাক, কোন উৎস থেকে আলোকরশ্মি গুচ্ছ কোনো মসৃণ তলের উপর গিয়ে পড়ছে। এই ক্ষেত্রে প্রতিফলিত রশ্মি গুলি প্রতিফলক তলে যে অংশ থেকে প্রতিফলিত হয়ে কোনো দর্শকের চোখে এসে পৌঁছায়, কেবল সেই অংশটিকেই ওই দর্শক অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখে, প্রতিফলক তলের অন্যান্য অংশ তুলনায়। অর্থাৎ ওই দর্শক প্রতিফলক দলের ওই অংশেই উৎসের প্রতিবিম্ব দেখে।



বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন কাকে বলে?

সমান্তরাল রশ্মি গুচ্ছ যদি কোনো অমসৃণ প্রতিফলক তলে আপতিত হয় তবে সেই রশ্মি গুচ্ছ আর সমান্তরাল রশ্মি গুচ্ছ রূপে প্রতিফলিত হয় না। আলোর এরূপ প্রতিফলনকে বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন বলা হয়।


বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের উদাহরণ হল, ঘরে দেয়াল সাদা কাগজ ঘষা কাজ সিনেমার পর্দা ইত্যাদি অমসৃণ, তাই এরা বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটায়।

www.bigyanbook.co.in


অমসৃণ তলের ক্ষেত্রে রশ্মি গুলির আপতন বিন্দুতে প্রতিফলক তলের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব গুলি পরস্পরের সমান্তরাল হয় না। সেই জন্য বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে আপতিত রশ্মি গুলি পরস্পরের সমান্তরাল হলেও, প্রতিফলিত রশ্মি গুলি পরস্পরের সমান্তরাল হয় না। অর্থাৎ বিক্ষিপ্ত হয় বা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হলে বস্তুর কোনো প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না। তাই ঘরের দেয়ালে আমরা আমাদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই না।

আমাদের চারপাশের অধিকাংশ বস্তুকেই আমরা বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের জন্যই দেখতে পাই। কোনো উৎস থেকে আলোকরশ্মি গুচ্ছ ওইসব বস্তুর অমসৃণ তলের ওপর আপতিত হয়ে, বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের ফলে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে দর্শক যেখানেই অবস্থান করুক না কেন প্রতিফলক তলের প্রায় সব অংশ থেকেই কিছু না কিছু প্রতিফলিত রশ্মি তার চোখে প্রবেশ করে এবং এর ফলে সে বস্তুটিকে স্পষ্টভাবে দেখতে পায়। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে প্রতিফলককে সবদিক থেকে মোটামুটি সমান উজ্জ্বল দেখায় এবং উৎসের কোনো প্রতিবিম্ব দেখা যায় না।


নিয়মিত ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের পার্থক্য

১) নিয়মিত প্রতিফলন: মসৃণ তলে এই ধরনের প্রতিফলন হয়।

     বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন: অমসৃণ তলে এই ধরনের প্রতিফলন হয়।


২) নিয়মিত প্রতিফলন: প্রতিফলক কোনো বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করতে পারে।

     বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন: প্রতিফলক কোনো বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করতে পারে না।


৩) নিয়মিত প্রতিফলন: প্রতিফলকের যে অংশ থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে কোনো দর্শকের চোখে যায়, শুধু সেই অংশটিকেই ওই দর্শক অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বলভাবে দেখতে পায়। দর্শকের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের জন্য সে প্রতিফলকের ভিন্ন ভিন্ন অংশ অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখে।

    বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন: প্রতিফলকের সব অংশ থেকেই আলো প্রতিফলিত হয়ে দর্শকের চোখে পৌঁছায়। তাই সে সমগ্র প্রতিফলকটিকেই মোটামুটি সমান উজ্জ্বল দেখে। দর্শকের অবস্থানের উপর ওই উজ্জ্বলতা নির্ভর করে না বললেই চলে।


৪) নিয়মিত প্রতিফলন: প্রতিফলিত রশ্মিগুচ্ছ আপতিত রশ্মিগুচ্ছের অনুরূপ হয়। যেমন, আপতিত রশ্মি গুচ্ছ একটি নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকলে, প্রতিফলিত রশ্মি গুচ্ছও একটি নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে। আপতিত রশ্মি গুচ্ছ পরস্পরের সমান্তরাল হলে, প্রতিফলিত রশ্মি গুচ্ছও পরস্পরের সমান্তরাল হয় ইত্যাদি।

     বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন: প্রতিফলিত রশ্মি গুচ্ছ আপতিত রশ্মি গুচ্ছের অনুরূপ হয় না। অর্থাৎ ওই রশ্মি গুচ্ছের মধ্যে কোন সাদৃশ্য থাকে না। যেমন আপতিত রশ্মি গুচ্ছ একটি নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকলেও, প্রতিফলিত রশ্মি গুচ্ছ কোনো নির্দিষ্ট অংশে সীমাবদ্ধ থাকে না। আপতিত রশ্মি গুচ্ছ পরস্পরের সমান্তরাল হলেও, প্রতিফলিত রশ্মি গুচ্ছ পরস্পরের সমান্তরাল হয় না ইত্যাদি।

নিয়মিত প্রতিফলন কি | বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন কি | নিয়মিত ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের পার্থক্য | প্রতিফলন পার্থক্য | নিয়মিত প্রতিফলন ও বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন 

প্রশ্ন উত্তর

এবারে আমরা প্রতিফলন সংক্রান্ত আরো বেশ কিছু তথ্য জানবো। আশা করি এই তথ্যগুলো জেনে তোমার খুব উপকার হবে। তাই অবশ্যই এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিও।


প্রতিফলন কত প্রকার ও কি কি?

প্রতিফলন দু প্রকারের হয়। যথা, নিয়মিত প্রতিফলন এবং বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন।


প্রতিফলনের সূত্র গুলি কি কি?

আলোর প্রতিফলন দুটি সূত্র মেনে চলে। এই সূত্র গুলি হল —

প্রতিফলনের প্রথম সূত্র: আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।

প্রতিফলনের দ্বিতীয় সূত্র: প্রতিফলন কোণ আপতন কোণের সমান হয়।


প্রতিফলন কোণ কাকে বলে?

প্রতিফলিত রশ্মি আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের ওপর অঙ্কিত অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে প্রতিফলন কোণ বলে।


রশ্মির চ্যুতি কাকে বলে?

প্রতিফলনের ফলে কোনো আলোকরশ্মি মূল পথ থেকে যতটা কোণে ঘুরে যায় তাকেই রশ্মির চ্যুতি বলা হয়।


আপতিত রশ্মি কাকে বলে?

প্রতিফলকের ওপর যে আলোকরশ্মি আপতিত হয় সেই আলোকরশ্মিকে আপতিত রশ্মি বলা হয়।


প্রতিফলিত রশ্মি কাকে বলে?

প্রতিফলক থেকে প্রতিফলিত হয়ে যে আলোকরশ্মি প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে সেই আলোকরশ্মিকে প্রতিফলিত রশ্মি বলা হয়।


আপতন বিন্দু কাকে বলে?

প্রতিফলকের যে বিন্দুতে কোনো আলোকরশ্মি এসে আপতিত হয় সেই বিন্দুকে আপতন বিন্দু বলে।


আপতন কোণ কাকে বলে?

আপতিত রশ্মি আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের ওপর অঙ্কিত অভিলম্বের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে আপতন কোণ বলে।

প্রতিফলন থেকে প্রশ্ন উত্তর | আলো থেকে প্রশ্ন উত্তর | সাজেশন | আলো

তোমাদের যদি আরো কিছু প্রশ্নোত্তর বা তথ্য জানার থাকে তাহলে অবশ্যই তোমরা নীচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে তোমাদের প্রশ্ন উত্তর যা আছে সবকিছু লিখে কমেন্ট করবে।


বিজ্ঞানবুক ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কোনো সাজেশন থাকলে বা আমাদের কোনো কিছু জানাতে হলে অবশ্যই আমাদের জানান 'Contact us' পেজে গিয়ে।

ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদেরকে লাইক করুন এবং ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। ফেসবুকে আমাদেরকে লাইক ফলো করার জন্য 'Follow us' এ গিয়ে 'Facebook' আইকনের উপর ক্লিক করলে আমাদের ফেসবুক পেজ খুলে যাবে।

এছাড়াও আমাদেরকে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন ইউটিউবে। ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করার জন্য একইভাবে 'Follow us' এ গিয়ে 'YouTube' আইকনের উপর ক্লিক করলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল খুলে যাবে।

এছাড়াও আপনি আমাদেরকে কু- অ্যাপ এ ফলো করতে পারেন। সেই জন্যই আপনি খুব অ্যাপ এ গিয়ে সার্চ করুন Bigyanbook এবং ফলো করুন আমাদেরকে কু অ্যাপে।

আপনি আমাদের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করতে পারেন। এইখানে আমরা পোস্ট করি বিভিন্ন ধরনের আমাদের নতুন নতুন আর্টিকেল প্রশ্নোত্তর এবং আরো বেশ কিছু জিনিস যা আপনার প্রয়োজনে লাগতে পারে। টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করার জন্য একইভাবে নীচে 'Follow us' এ গিয়ে 'Join Telegram' আইকনের উপর ক্লিক করলে আমাদের অফিসিয়াল টেলিগ্ৰাম চ্যানেল খুলে যাবে।

পড়তে থাকুন বিজ্ঞান বুক। শেয়ার করতে থাকুন আমাদের বিভিন্ন আর্টিকেলগুলি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অল দ্য বেস্ট!

Bigyanbook

Share your feedback! Share this post! Explore all posts. Thanks for reading. facebook youtube whatsapp email

2 মন্তব্যসমূহ

  1. ধন্যবাদ 🙏❤️

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ! বিজ্ঞানবুকে আপনাকে স্বাগত!❤️❤️

      মুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন