ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া

Contents

    নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া সম্বন্ধে। এর সঙ্গে থাকবে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্তর। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

    www.bigyanbook.co.in


    ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া কি?

    যে সমস্ত গাঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টি হয় তাকেই ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া বলে।


    ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়ার শ্রেণীবিভাগ

    ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া দু ভাগে বিভক্ত। যথা বহির্জাত প্রক্রিয়া এবং অন্তর্জাত প্রক্রিয়া।


    (1) বহির্জাত প্রক্রিয়া

    বই যত প্রক্রিয়া বলতে ভূত্বকের উপরিভাগে ক্রিয়াশীল আবহবিকার পুঞ্জিত স্খলন (Mass wasting) ও ক্ষয়ের মাধ্যমে নগ্নীভবনকে বোঝায়। অবরোহন (Degradation) এবং আরোহন (Aggradation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূভাগ ভারসাম্যে উপনীত হয়।


    (2) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া

    ভূ অভ্যন্তরে উদ্ভূত বলের প্রভাবে স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে কঠিন ভূত্বকের যে ধীর ও আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে তাকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে। 

    (A) ভূ বিপর্যয় (Diastrophism) এবং (B) আগ্নেয়োচ্ছাস (Volcanism) এর মাধ্যমে এই অন্তর্জাত প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।


    (A) ভূ বিপর্যয়

    এই আলোড়নের ফলে ভূত্বকের অনুভূমিক ও উলম্ব স্থানান্তর ঘটে। এর প্রভাবে পর্বত এবং মালভূমির সৃষ্টি হয়, শিলাস্তরে ভাঁজ পরে এবং চ্যুতির সৃষ্টি হয়। ভূ আলোড়ন ধীর কিংবা আকস্মিকভাবে ঘটে। ধীর ভূ-গাঠনিক আলোড়নকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেগুলি হলো —

    (i) মহীভাবক আলোড়ন (Eperogenic Movement) :

    গ্রিক শব্দ 'epeiros' যার অর্থ মহাদেশ এবং 'genesis' যার অর্থ হলো সৃষ্টি। অর্থাৎ 'epeirogenic' শব্দের অর্থ হল মহাদেশ গঠন। সুতরাং বলা যায় যে ভূ আলোড়নের ফলে মহাদেশ গঠিত হয় তাকে মহীভাবক আলোড়ন বলে।

    এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে উলম্বভাবে অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর কাজ করে বা ঘটে। এই আলোড়নে ভূত্বকীয় অংশ উলম্বভাবে ঊর্ধ্বে উঠে যায় বা নীচে বসে যায়। মহীভাবক আলোড়নে মহাদেশ, মালভূমি, চ্যুতি, স্তুপ পর্বত, গ্রস্ত উপত্যকা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। আবার উলম্ব আলোড়ন ব্যাসার্ধ বরাবর কেন্দ্রমুখী হলে মহাদেশের অংশ বসে গিয়ে সাগর বা মহাসাগরের সৃষ্টি হয়।

    (ii) গিরিজনি আলোড়ন (Orogenic Movement) :

    যে ভু আলোড়নে মূলত ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয় তাকে গিরিজনি আলোড়ন বলে। গ্রিক শব্দ 'oros' যার অর্থ হল পর্বত এবং 'genesis' যার অর্থ হলো সৃষ্টি। এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিক ভাবে কাজ করে। ফলে ভূত্বকে টান পড়ে শিলায় সংকোচন ও পীড়ন ঘটে। গিরিজনি আলোড়নে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়।


    (B) আগ্নেয়োচ্ছাস

    আগ্নেয়োচ্ছাস এর প্রভাবে ম্যাগমা ভু অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এসে মালভূমি ও আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি করে।


    এবার আমরা জানব বেশ কিছু প্রশ্ন উত্তর তথ্য।

    প্রশ্ন উত্তর

    ১) মহীভাবক আলোড়ন কাকে বলে?

    উত্তর: যে ভূ আলোড়নের ফলে মহাদেশ গঠিত হয় তাকে মহীভাবক আলোড়ন বলে।


    ২) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া কাকে বলে?

    উত্তর: ভূ অভ্যন্তরে উদ্ভূত বলের প্রভাবে স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে কঠিন ভূত্বকের যে ধীর ও আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে তাকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে।


    ৩) গিরিজনি আলোড়ন কাকে বলে?

    উত্তর: যে ভু আলোড়নে মূলত ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয় তাকে গিরিজনি আলোড়ন বলে।


    ৪) ভূমিরূপ কাকে বলে?

    উত্তর: ভূপৃষ্ঠ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্যময় রূপকে ভূমিরূপ বলে।


    ৫) ভূমিরূপ কয় প্রকার?

    উত্তর: উচ্চতা এবং অন্যান্য ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে ভূমিরূপ কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- পর্বত, মালভূমি এবং সমভূমি।


    ৬) আপেক্ষিক উচ্চতা কাকে বলে?

    উত্তর: কোনো ভূভাগের নিম্নাংশ এবং শিখর দেশের উচ্চতার পার্থক্যকে আপেক্ষিক উচ্চতা বলে।


    ৭) পর্বত কাকে বলে?

    উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতা সম্পন্ন, বহুদূর বিস্তৃত, শিলাময় ভূমিরূপ যার ভূপ্রকৃতি বন্ধুর অর্থাৎ আপেক্ষিক উচ্চতা বেশি, খাড়া ঢাল যুক্ত এবং অসংখ্য শৃঙ্গ ও গিরিখাত বর্তমান তাকেই পর্বত বলে।


    ৮) মালভূমি কাকে বলে?

    উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৩০০ মিটারের অধিক উঁচু, বহু দূর বিস্তৃত, চারিদিকে খাড়া ঢাল যুক্ত ভূমিরূপ যার উপরিভাগ তরঙ্গায়িত বা ঢেউ খেলানো অর্থাৎ আপেক্ষিক উচ্চতা মধ্যম প্রকার তাকেই মালভূমি বলে।


    ৯) সমভূমি কাকে বলে?

    উত্তর: সমুদ্র পৃষ্ঠীয় তলে বা সামান্য উঁচুতে, ৩০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত, মৃদু ঢাল যুক্ত অর্থাৎ আপেক্ষিক উচ্চতা সামান্য, সু-বিস্তৃত সমতল ভুভাগকে সমভূমি বলে।


    ১০) পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ কোনটি?

    উত্তর: ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা বদ্বীপ হলো পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।


    ১১) পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রস্ত উপত্যকা কোনটি?

    উত্তর: পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রস্ত উপত্যাকা হলো, পূর্ব আফ্রিকার প্রায় ৪৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্য গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি (The Great Rift Valley) ।


    ১২) পাত সংস্থান তত্ত্বের জনক কে?

    উত্তর: ফরাসি বিজ্ঞানী পিচোঁ হলো পাত সংস্থান তত্ত্বের জনক। ১৯৬৮ সালে সর্বপ্রথম এই তত্ত্বটিকে ফরাসি বিজ্ঞানী পিচোঁ অতি সহজ সরল ভাবে উপস্থাপিত করেন।


    ১৩) মহীভাবক আলোড়ন বলতে কী বোঝ?

    উত্তর: যে ভূ আলোড়নের ফলে মহাদেশ গঠিত হয় তাকে মহীভাবক আলোড়ন বলে।

    এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে উলম্বভাবে অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর কাজ করে বা ঘটে। এই আলোড়নে ভূত্বকীয় অংশ উলম্বভাবে ঊর্ধ্বে উঠে যায় বা নীচে বসে যায়। মহীভাবক আলোড়নে মহাদেশ, মালভূমি, চ্যুতি, স্তুপ পর্বত, গ্রস্ত উপত্যকা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। আবার উলম্ব আলোড়ন ব্যাসার্ধ বরাবর কেন্দ্রমুখী হলে মহাদেশের অংশ বসে গিয়ে সাগর বা মহাসাগরের সৃষ্টি হয়।


    কেমন লাগছে বিজ্ঞান বুক পড়তে অবশ্যই জানান কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। এছাড়াও যদি কোন প্রশ্ন থেকে তাকে আপনি জানাতে পারেন নীচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন আর আপডেট পান সমস্ত পোস্ট এর। ইউটিউবে আমাদেরকে সাবস্ক্রাইব না করে থাকলে এখুনি সাবস্ক্রাইব করুন ইউটিউব এ। লাইক করুন আমাদেরকে ফেসবুকে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    Post a Comment (0)
    Previous Post Next Post

    My Favorites ❤️

    See your favorite posts by clicking the love icon at the top ❤️
    ⚠️
    AdBlocker Detected
    We noticed that you are using an AdBlocker.

    Our website is free to use, but we need ads to cover our server costs. Please disable your AdBlocker and reload the page to continue reading.