মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

Text size:

নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য। প্রত্যেকটা দশার উপর পার্থক্য দেয়া হয়েছে। যথা, প্রফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ, টেলোফেজ, সাইটোকাইনেসিস। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

www.bigyanbook.co.in


মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

১) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোশ বিভাজন দেহ কোষে ঘটে।

    মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজন জনন মাতৃকোশে, রেণু মাতৃকোশে এবং কিছু নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদে গ্যামেট উৎপন্নকালে জাইগোটে সংঘটিত হয়।


২) মাইটোসিস : এই কোষ বিভাজন হ্যাপ্লয়েড বা ডিপ্লয়েড কোষে ঘটে থাকে।

     মিয়োসিস : এই কোষ বিভাজন সর্বদা ডিপ্লয়েড (2n) কোষে ঘটে।


৩) মাইটোসিস : মাইটোসিস পদ্ধতিতে একটি বিভাজন ঘটে এবং যা থেকে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস পদ্ধতিতে দুটি বিভাজন ঘটে যা থেকে চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।


৪) মাইটোসিস : প্রতিটি মাইটোসিস বিভাজনের আগে ইন্টারফেজ দশা থাকে।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস-I -এর আগে ইন্টারফেজ দশা থাকলেও, মিয়োসিস-II -এর আগে ইন্টারফেজ নাও থাকতে পারে।


৫) মাইটোসিস : এই কোষ বিভাজন তুলনামূলকভাবে সরল প্রকৃতির।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজন জটিল প্রকৃতির হয়।


৬) মাইটোসিস : মাইটোসিস বিভাজন সম্পূর্ণ হতে কম সময় লাগে।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস বিভাজন সম্পূর্ণ হতে বেশি সময় লাগে।


৭) মাইটোসিস : একটি কোষে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বার বার হতে পারে।

     মিয়োসিস : একটি কোষে সম্পূর্ণ মিয়োসিস বিভাজন শুধুমাত্র একবারই হয়।


৮) মাইটোসিস : মাইটোসিস হল সমবিভাজন।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস হল হ্রাস বিভাজন।


৯) মাইটোসিস : এই বিভাজনের ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্রোমোজোমে ইন্টারফেজ দশায় DNA -র প্রতিলিপি গঠিত হয়।

      মিয়োসিস : মিয়োসিস-1 এর পূর্বে ইন্টারফেজ দশায় একবার DNA -র প্রতিলিপি গঠিত হয়। ইন্টারকাইনেসিস দশায় DNA -র প্রতিলিপি গঠিত হয় না।


১০) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান হয়।

       মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজন সম্পূর্ণ হলে অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃ কোষের অর্ধেক হয়।


১১) মাইটোসিস : অপত্য কোষ বা নিউক্লিয়াস মাতৃকোষের অনুরূপ হয়।

       মিয়োসিস : অপত্য কোষ বা নিউক্লিয়াস মাতৃকোষের অনুরূপ হয় না।


১২) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের সাহায্যে এককোষী জীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে।

       মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজন এককোষী জীবের বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।


১৩) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজন দেহের ক্ষত নিরাময় ও মেরামতির কাজে অংশগ্রহণ করে।

       মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজন গ্যামেট ও রেণু উৎপাদন, প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখা প্রভৃতি কাজে অংশগ্রহণ করে।


১৪) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনে কোনো প্রকরণের সৃষ্টি হয় না। জৈব বিবর্তনে এর কোনো ভূমিকা নেই।

       মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য কোষে প্রকরণের আবির্ভাব ঘটে। জৈব বিবর্তনে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


প্রফেজ দশায় মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

১) মাইটোসিস : এই বিভাজনে প্রফেজ একবার ঘটে।

     মিয়োসিস : এই বিভাজনে প্রফেজ দুবার ঘটে। যথা, প্রফেজ-I এবং প্রফেজ-II ।


২) মাইটোসিস : এই বিভাজনের ক্ষেত্রে প্রফেজ দশার সময়কাল সংক্ষিপ্ত।

     মিয়োসিস : এই বিভাজনের ক্ষেত্রে প্রফেজ-I দীর্ঘ কিন্তু প্রফেজ-II সংক্ষিপ্ত সময়ের হয়।


৩) মাইটোসিস : এক্ষেত্রে এই দশা সরল হয় এবং কোনো উপদশায় বিভক্ত থাকে না।

     মিয়োসিস : এক্ষেত্রে প্রফেজ-I দশাটি জটিল হয় এবং এটি পাঁচটি উপদেশ বিভক্ত থাকে। যথা, লেপ্টোটিন, জাইগোটিন, প্যাকেটিন, ডিপ্লোটিন ও ডায়াকাইনেসিস।


৪) মাইটোসিস : এই বিভাজনে এই দশায় 'বোকে স্টেজ' দেখা যায় না।

     মিয়োসিস : এই বিভাজনে এই দশায় প্রাণী কোষে 'বোকে স্টেজ' এবং উদ্ভিদ কোষে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সদৃশ গঠন বা সাইনেজেসিস দেখা যায়।


৫) মাইটোসিস : এই বিভাজনে প্রফেজ দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোটবদ্ধ (সাইন্যাপসিস) হয় না এবং বাইভ্যালেন্ট গঠিত হয় না।

     মিয়োসিস : এই বিভাজনের ক্ষেত্রে প্রফেজ-I -এ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়া সাইন্যাপসিস পদ্ধতিতে বাইভ্যালেন্ট গঠন করে।


৬) মাইটোসিস : এই বিভাজনের এই দশায়, সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্স থাকে না।

     মিয়োসিস : এই বিভাজনের এই দশায় সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্স সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়ের মাঝখানে গঠিত হয়।


৭) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রফেজ দশায় ক্রসিং ওভার ঘটে না, কায়াজমা গঠিত হয় না।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনের প্রফেজ দশায় প্যাকাইটিন উপদশায় ক্রসিং ওভার ঘটে এবং ডিপ্লোটিন ডায়াকাইনেসিস উপ দশায় কায়াজমা দেখা যায়।



মেটাফেজ দশায় মাইটোসিস ও মিয়োসিস এর পার্থক্য

১) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মেটাফেজ দশা একবার ঘটে।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনে মেটাফেজ দশা দুবার ঘটে। যথা, মেটাফেজ-I ও মেটাফেজ-II ।


২) মাইটোসিস : এই কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোম ডায়াড দশায় অবস্থান করে।

     মিয়োসিস : এই কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোম টেট্রাড দশায় অবস্থান করে।


৩) মাইটোসিস : এক্ষেত্রে স্পিন্ডলের নিরক্ষীয় অঞ্চলে ক্রোমোজোমগুলি অবস্থান করে কিন্তু উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে বাহুগুলির নির্দিষ্ট কোনো সজ্জারীতি থাকে না।

     মিয়োসিস : এক্ষেত্রে স্পিন্ডলের নিরক্ষীয় অঞ্চলে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে। বাহুগুলি মেরুর দিকে বিস্তৃত থাকে।


৪) মাইটোসিস : এক্ষেত্রে একটিমাত্র সেন্ট্রোমিয়ার উভয় মেরুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্পিন্ডল তন্তুর মাধ্যমে যুক্ত থাকে।

     মিয়োসিস : এক্ষেত্রে প্রতিটি সেন্ট্রোমিয়ার মেটাফেজ-I এর স্পিন্ডলে একটি পৃথক মেরুর সঙ্গে এবং মেটাফেজ-II তে উভয় মেরুর সঙ্গে স্পিন্ডল তন্তু দ্বারা যুক্ত থাকে।


৫) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটি সমপ্রকৃতির জিন ধারণ করে।

    মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোম এ সিস্টার ক্রোমাটিড দুটিতে জিনের বিন্যাস সমপ্রকৃতির হয় না।



অ্যানাফেজ দশায় মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

১) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অ্যানাফেজ দশা একবার ঘটে।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনে অ্যানাফেজ দশা দুবার ঘটে। যথা, অ্যানাফেজ-I ও অ্যানাফেজ-II ।


২) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অ্যানাফেজ দশার প্রথমেই সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয়।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনে অ্যানাফেজ-I এ সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয় না। কিন্তু অ্যানাফেজ-II দশাতে সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয়।


৩) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার অপত্য ক্রোমোজোম একটি মাত্র ক্রোমাটিড যুক্ত হয়।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ-I দশার ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড যুক্ত এবং অ্যানাফেজ-II দশার ক্রোমোজোম একটি ক্রোমাটিড যুক্ত হয়।


৪) মাইটোসিস : এক্ষেত্রে সমপ্রকৃতির অপত্য ক্রোমোজোম গুলি পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে অগ্রসর হয়।

     মিয়োসিস : অ্যানাফেজ-I এবং অ্যানাফেজ-II দশার উভয় ক্ষেত্রেই অসম প্রকৃতির ক্রোমোজোম গুলি বিপরীত মেরুর দিকে অগ্রসর হয়।



টেলোফেজ দশায় মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

১) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনে টেলোফেজ দশা একবার ঘটে।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনে টেলোফেজ দশা দুবার ঘটে। যথা, টেলোফেজ-I এবং টেলোফেজ-II।


২) মাইটোসিস : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের টেলোফেজ দশা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এক্ষেত্রে অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।

     মিয়োসিস : মিয়োসিস কোষ বিভাজনে টেলোফেজ-I দশা ক্ষণস্থায়ী হয় বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকে।



সাইটোকাইনেসিস দশায় মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য

১) মাইটোসিস : প্রতিটি মাইটোসিস কোষ বিভাজনের শেষ পর্যায় সাইটোকাইনেসিস ঘটে এবং দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।

     মিয়োসিস : অনেক ক্ষেত্রে মিয়োসিস-I কোষ বিভাজনের শেষে সাইটোকাইনেসিস ঘটে না। মিয়োসিস-II কোষ বিভাজনের শেষে একসাথে সাইটোকাইনেসিস ঘটে এবং চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়।


কেমন লাগছে বিজ্ঞানবুক পড়তে? অবশ্যই জানান কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। আপনি কি Bigyanbook এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে এক্ষুনি ইউটিউবে গিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞানবুক এর ইউটিউব চ্যানেল। ফলো করুন বিজ্ঞানবুক -কে ফেসবুকে। শেয়ার করুন এই আর্টিকেলটি অন্যান্যদের সাথে। পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক। ধন্যবাদ।।

Share this page
Bigyanbook

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook whatsapp email

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন