নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো আর্সেনিক দূষণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। আমরা জানবো আর্সেনিক দূষণের উৎস, আর্সেনিকের জৈবিক প্রতিক্রিয়া, আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
আর্সেনিক দূষণ কাকে বলে ?
উত্তর: জল এবং মাটিতে মারাত্মক দূষক এবং ক্রমসঞ্চয়মান বিষ আর্সেনিক মিশে যে দূষণের সৃষ্টি হয় তাকে আর্সেনিক দূষণ বলে।
আর্সেনিক হলো একটি অত্যন্ত মারাত্মক জল দূষক এবং একটি ক্রমসঞ্চয়মান বিষ (Cumulative poison)।
উৎস
সাধারণত চাষের কাজে ব্যবহৃত আর্সেনিক ঘটিত বিভিন্ন কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং অবাঞ্ছিত উদ্ভিদনাশকের মাধ্যমে জল এবং মাটিতে আর্সেনিকের প্রবেশ ঘটে থাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এর স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ (School of Environmental Studies) এর গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবাংলার বেশ কয়েকটি জেলার ভূগর্ভস্থ জলে প্রচুর আর্সেনিক রয়েছে এবং ওই জল ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মানুষ আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ক্রমাগত হয়ে চলেছে। গবেষকদের মতে এখানে মাটির নীচে যে আর্সেনিক সম্বন্ধিত আইরন পাইরাইটিস খনিজ রয়েছে, তার থেকে এই আর্সেনিক জলের মধ্যে চলে আসছে। কোনো কোনো জায়গার নলকূপের জলে 1.5 ppb পর্যন্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, 10 ppb পর্যন্ত আর্সেনিক থাকলে সেই জল পান করলে আর্সেনিক বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
আর্সেনিকের জৈবিক প্রতিক্রিয়া (Biological effects of arsenic)
আর্সেনিক কয়েকটি বিভিন্ন অবস্থায় জল এবং মাটিতে অবস্থান করে। এগুলি হলো —
(১) As(III) বা ত্রিযোজী আর্সেনিক, (২) As(V) বা পঞ্চযোজী আর্সেনিক, (৩) মিথাইল আর্সেনিক অ্যাসিড [(CH3)2AsOOH] এবং (৪) ট্রাই মিথাইল আর্সাইন [(CH3)3As]। আর্সেনিকের এই যৌগ গুলির মধ্যে ত্রিযোজী আর্সেনিক As(III) -এর বিষক্রিয়ায় হল সবচেয়ে মারাত্মক রকমের। কতকগুলি বিশেষ এনজাইমের -SH মূলকের প্রতি আর্সেনিকের প্রচন্ড আসক্তি আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার মূল কারণ। বিশেষ করে সাইট্রিক অ্যাসিড চক্রের (যা কোষের ভিতর শক্তি সৃষ্টি করে) কয়েকটি বিশেষ প্রয়োজনীয় এনজাইম এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আর্সেনিক তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। যথা, ১) পাইরুভেট ডিহাইড্রোজেনেজ এনজাইমের -SH মূলকের সঙ্গে ত্রিযোজী আর্সেনিক যুক্ত হয়ে ATP তৈরীর প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেয়। ২) ATP তৈরি সময় একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যৌগের ফসফরাস কে আর্সেনিক দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে ATP তৈরীর কাজে বাধার সৃষ্টি করে। ৩) কতকগুলি প্রোটিনের -SH মূলকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওই প্রোটিন গুলিকে তঞ্চিত করে এবং তাদের সেকেন্ডারি এবং টারসিয়ারি গঠনকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে ওই প্রোটিন গুলি তাদের নিজের নিজের ভূমিকা পালন করতে পারে না।
একটি ক্রমসঞ্চয়মান বিষ হওয়ার কারণে আর্সেনিক বেশি দিন ধরে খুব সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন পরে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া, শরীরে দেখা যায়। একবার আর্সেনিক বিষক্রিয়া শুরু হলে তা ক্রোনিক (chronic) হয়ে যায় এবং ওই বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক (Antidotes of arsenic poisoning)
যেকোনো আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রতিষেধকের মধ্যে -SH মূলক থাকা অবশ্য প্রয়োজন। আবার ওই যৌগটিতে একাধিক -SH মূলক এমন জায়গায় থাকা প্রয়োজন যে ওই যৌগটি ওইসব -SH মূলকের মাধ্যমে আর্সেনিকের সঙ্গে জলে দ্রবণীয় চিলেট জাতীয় জটিল যৌগ গঠন করতে পারে। BAL হলো সবচেয়ে কার্যকরী একটি আর্সেনিক প্রতিষেধক। এ ক্ষেত্রে বলে রাখি যে, BAL হলো আর্সেনিক এবং লেড এই উভয়েরই প্রতিষেধক।
আর্সেনিক বিষক্রিয়ার তীব্র প্রভাব
তীব্র আর্সেনিক বিষক্রিয়ার কারণে তাৎক্ষণিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বমি, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া। এগুলোর পরে হাতের অসাড়তা এবং ঝাঁকুনি, পেশীতে ক্র্যাম্পিং এবং চরম ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
আর্সেনিক বিষক্রিয়ার দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব
আর্সেনিক দূষণের ফলে মানব শরীরে আর্সেনিক বিষ দীর্ঘকাল ধরে প্রবেশ করতে থাকলে, শরীরে যে লক্ষণ গুলি প্রথমে দেখা যায় তা হল ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা। ত্বকের এই বিভিন্ন সমস্যাগুলির মধ্যে যেগুলি দেখা যায় সেগুলি হল, ত্বকের ক্ষত এবং পায়ের তালু এবং তলায় শক্ত দাগ (হাইপারকেরাটোসিস)। শরীরে আর্সেনিক প্রবেশ করা শুরু থেকে পাঁচ বছর পরে প্রধানত এই লক্ষণ গুলি দেখা যায়। যা ত্বকের ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ।
ত্বকের ক্যান্সার ছাড়াও আর্সেনিকের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে, মূত্রাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সারও ঘটতে পারে।
আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ
• উচ্চ-আর্সেনিক উৎস, যেমন ভূগর্ভস্থ জল এর পরিবর্তে নিম্ন-আর্সেনিক মাইক্রোবায়োলজিক্যালভাবে নিরাপদ উৎস যেমন বৃষ্টির জল এবং শোধিত ভূ-পৃষ্ঠের জল এর ব্যবহার করতে হবে। নিম্ন-আর্সেনিক জল, পানের ক্ষেত্রে, রান্না এবং সেচের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে উচ্চ-আর্সেনিক জল অন্যান্য উদ্দেশ্যে যেমন স্নান এবং কাপড় ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
• উচ্চ-আর্সেনিক এবং নিম্ন-আর্সেনিক উৎসের জল কোনগুলি সেগুলি আগে পরীক্ষা করে নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করা এবং বিভিন্ন রঙের নলকূপ বা হ্যান্ড পাম্প রং করা বা মার্কিং করা। এটি হলো বিশেষভাবে উপযোগী একটি পদ্ধতি।
• আর্সেনিক অপসারণ করে এমন সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে। এবং অপসারিত আর্সেনিকের যথাযথ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ওই অপসারিত আর্সেনিক নতুন ভাবে আর জলে না মেশে সেই দিকে নজর রাখতে হবে। আর্সেনিক অপসারণের ক্ষেত্রে যে সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় সেগুলি হল —
oxidation, coagulation-precipitation, absorption, ion exchange and membrane techniques । আর্সেনিক অপসারণ করার এই প্রযুক্তি গুলি অত্যন্ত কার্যকর এবং কম খরচ সাপেক্ষ।
বিজ্ঞানবুক ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কোনো সাজেশন থাকলে বা আমাদের কোনো কিছু জানাতে হলে অবশ্যই আমাদের জানান 'Contact us' পেজে গিয়ে।
ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদেরকে লাইক করুন এবং ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। ফেসবুকে আমাদেরকে লাইক ফলো করার জন্য 'Follow us' এ গিয়ে 'Facebook' আইকনের উপর ক্লিক করলে আমাদের ফেসবুক পেজ খুলে যাবে।
এছাড়াও আমাদেরকে অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন ইউটিউবে। ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করার জন্য একইভাবে 'Follow us' এ গিয়ে 'YouTube' আইকনের উপর ক্লিক করলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল খুলে যাবে।
এছাড়াও আপনি আমাদেরকে কু- অ্যাপ এ ফলো করতে পারেন। সেই জন্যই আপনি খুব অ্যাপ এ গিয়ে সার্চ করুন Bigyanbook এবং ফলো করুন আমাদেরকে কু অ্যাপে।
আপনি আমাদের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করতে পারেন। এইখানে আমরা পোস্ট করি বিভিন্ন ধরনের আমাদের নতুন নতুন আর্টিকেল প্রশ্নোত্তর এবং আরো বেশ কিছু জিনিস যা আপনার প্রয়োজনে লাগতে পারে। টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করার জন্য একইভাবে নীচে 'Follow us' এ গিয়ে 'Join Telegram' আইকনের উপর ক্লিক করলে আমাদের অফিসিয়াল টেলিগ্ৰাম চ্যানেল খুলে যাবে।
পড়তে থাকুন বিজ্ঞান বুক। শেয়ার করতে থাকুন আমাদের বিভিন্ন আর্টিকেলগুলি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অল দ্য বেস্ট!