জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীব বৈচিত্র্যের গুরুত্ব, অবলুপ্তির কারণ, প্রশ্ন উত্তর

Contents

    নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

    Bigyanbook
    জীববৈচিত্র্য


    জীব বৈচিত্র্য কাকে বলে ?

    উত্তর: বিভিন্ন প্রকার বাস্তু তন্ত্রের অথবা পরিবেশে কিংবা আবাসস্থলে জীবের মধ্যে যেসব বিভিন্নতা দেখা যায় তাকে এককথায় জীব বৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।


    বিজ্ঞানী W G Rosen সর্বপ্রথম 1985 খ্রিস্টাব্দে 'Biodiversity' শব্দটি প্রবর্তন করেন।


    পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য

    সমগ্র পৃথিবীতে কত প্রকারের প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতি আছে তা জীব বৈচিত্র্যের হিসেব করলে পাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে, পৃথিবীর জীবজগতে মোট প্রজাতির সংখ্যা 5 থেকে 50 মিলিয়ন। এর মধ্যে মাত্র 1.7 থেকে 1.8 মিলিয়ন প্রজাতির পরিচয় উদঘাটিত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে তিন লক্ষ প্রজাতির সবুজ উদ্ভিদ ও ছত্রাক, 3 লক্ষ 60 হাজার প্রজাতির জীবাণু, 8 লক্ষ প্রজাতির পতঙ্গ এবং 40 হাজার প্রজাতির মেরুদন্ডী প্রাণী। 

    বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী, পৃথিবীজুড়ে জীব বৈচিত্র্যের আসন বিন্যাস ঘটেছে। শুধুমাত্র অনুকূল ও উপযুক্ত পরিবেশে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির অত্যাধিক ভিড় দেখা যায়। বিষুবরেখার দুইপাশে উষ্ণ ও আর্দ্র জায়গাগুলোতেই বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদ ও প্রাণী জীব বৈচিত্র্য কে সমৃদ্ধ করেছে। বিষুবরেখার দু'পাশের এমন সমৃদ্ধ দেশ গুলিকে মেগাডাইভারসিটি দেশ বা Megadiversity Country বলে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতবর্ষ, মাদাগাস্কার, পেরু, অস্ট্রেলিয়া ও কলম্বিয়া মেগাডাইভারসিটি দেশের অন্তর্গত।


    জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

    1. খাদ্যের উৎস হিসেবে সবুজ উদ্ভিদ : 

    খাদ্য শৃংঙ্খল এর মাধ্যমে বাস্তু তন্ত্রের প্রতিটি জীব উৎপাদকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে পুষ্টি পদার্থ সংগ্রহ করে। বর্তমানে চাষযোগ্য মোট উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় 2500। আমরা এদের থেকে খাদ্য সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন রকমের প্রসাধন বস্তু ও ঔষধ সংগ্রহ করি। বর্তমান পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন উচ্চ ফলনশীল উদ্ভিদ প্রজাতির চাষের উপর নির্ভরশীল।

    2. ড্রাগ ও ওষুধের উৎস হিসেবে : 

    মানুষের রোগ নিরাময় ও স্বাস্থ্য রক্ষায় ভেষজ উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিসীম। মরফিন, কুইনাইন, ট্যাক্সাস প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ড্রাগ আমরা উদ্ভিদ থেকে পাই।

    3. জিন ভান্ডার হিসেবে : 

    জীব বৈচিত্র্য আসলে নানারকম জিন সম্ভারের পরিচায়ক। জীবের এই জিন সম্ভার মানুষের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। বর্তমানে পছন্দসই জিন আহরণ করে অন্য জীবে প্রবেশ করিয়ে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

    4. প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় : 

    বাস্তুতন্ত্রে জীব সম্প্রদায় পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। কোনো একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্তি হওয়ার অর্থ হল খাদ্য শৃংঙ্খল এর বিঘ্ন ঘটা এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া।

    5. অর্থনৈতিক গুরুত্ব : 

    জীব বৈচিত্র্য একটি দেশের মূল্যবান সম্পদ এবং সমৃদ্ধির পরিচায়ক। বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। জীবাণুদের কাজে লাগিয়ে শিল্প গড়ে উঠেছে।

    6. পরিবেশ রক্ষায় : 

    বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরিবেশ শীতল রাখতে, পরিবেশ দূষণ রোধ করতে, বৃষ্টিপাত ঘটাতে উদ্ভিদের অবদান অনস্বীকার্য। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হলো সবুজ ধ্বংস হওয়া।

    7. কৃষ্টিগত গুরুত্ব : 

    জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষের মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। মানুষের সঙ্গে অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জীব বৈচিত্র্য থেকেই মানুষ সৌন্দর্যবর্ধক বস্তু, সঙ্গী প্রাণী, আসবাপত্র নির্মাণের কাঠ, পশুচর্ম, অস্থি ইত্যাদি সংগ্রহ করে।

    8. মূল্যবোধ : 

    জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরিও শহরে প্রথম বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গৃহীত হয়।



    জীববৈচিত্র্যের অবলুপ্তির কারণ

    1. শিকার : 

    মানুষ অর্থের লোভে বা নিছক শিকারের আনন্দে পশুপাখি শিকার করে। এর ফলে আজ অনেক বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির মুখে।

    2. অরণ্য ধ্বংস : 

    গৃহনির্মাণ, কল কারখানা নির্মাণ, চাষবাস ইত্যাদির প্রয়োজনে মানুষ অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে। এর ফলস্বরূপ বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বন জঙ্গল অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

    3. দূষণ : 

    বায়ু, মাটি ও জল দূষণ আজ বহু জীব বৈচিত্র্য কে অবলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে।

    4. প্রাকৃতিক বিপর্যয় : 

    বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেমন, খরা, বন্যা, তুষারপাত, ভূমিকম্প, সুনামি, দাবানল, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ইত্যাদির কারণে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটছে।

    5. প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন : 

    প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

    6. আন্তর্জাতিক ব্যবসা : 

    বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া, লোম, দাঁত, শিং ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানী করার জন্য বহু প্রাণী নিধন করা হচ্ছে, ফলে ওইসব প্রাণীরা বিলুপ্তির পথে এসে দাঁড়িয়েছে।

    7. বিদেশি প্রজাতির অনুপ্রবেশ : 

    অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা উদ্ভিদ প্রজাতি যেগুলি আমাদের দেশের জলবায়ুতে বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার দ্রুত হয়েছে, তাদের জন্যে অনেক স্থানীয় দুর্বল প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।


    এক্স সিটু সংরক্ষণ কাকে বলে ?

    উত্তর: উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল এর বাইরে তাদের সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে এক্স সিটু সংরক্ষণ বলে।


    এক্স সিটু সংরক্ষণ এর উদাহরণ লেখো।

    উত্তর: রয়েল বেঙ্গল টাইগার কে আলিপুর চিড়িয়াখানায় রেখে তাদের বাঁচিয়ে রাখা এবং বংশ বৃদ্ধি করা হলো এক্স সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।


    এক্স সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি লেখো।

    উত্তর: ১) জার্মপ্লাজম ব্যাংকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংরক্ষণ করা হয়।

    ২) উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণের সহজতম উপায় হল জিন ও সিড ব্যাংকে সংরক্ষণ।

    ৩) পরাগরেণু, বীজ, গাছের বিভিন্ন অংশ প্রায় -190°C সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা যায়। একে ক্রায়ো সংরক্ষণ বলে।

    ৪) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিড়িয়াখানায় বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী দের সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বোটানিক্যাল গার্ডেনেও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।


    হটস্পট নির্ধারণের শর্ত কি ?

    উত্তর: ১) স্থানীয় বা আঞ্চলিক প্রজাতির সংখ্যা অর্থাৎ যে সব প্রজাতির জীব কোনো স্থানে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে এবং তারা কেবল ওই বিশেষ স্থানেই সীমাবদ্ধ — এরূপ প্রজাতির সংখ্যা।

    ২) বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা যারা নিকট ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।


    ইন সিটু সংরক্ষণ কাকে বলে ?

    উত্তর: প্রাকৃতিক বাসস্থানে অর্থাৎ নিজস্ব পরিবেশে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণকে ইন সিটু সংরক্ষণ বলে।


    ইন সিটু সংরক্ষণ এর উদাহরণ লেখো।

    উত্তর: রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে সুন্দরবন অভয়ারণ্যে সংরক্ষণ করা। সুন্দরবন অভয়ারণ্য হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর নিজস্ব পরিবেশ।


    স্পিসিস ডাইভারসিটি কাকে বলে ?

    উত্তর: একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের অন্তর্গত প্রজাতির বৈচিত্র্য হলো স্পিসিস ডাইভারসিটি বলে।


    বাফার জোন কি ?

    উত্তর: কোর জোনকে বেষ্টন করে অবস্থিত প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চল, যা বিজ্ঞানসম্মত ও পরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করা হয়, যেখানে মানুষের সীমিত কার্যকলাপ অনুমোদিত, যা বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ, শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিভিন্ন উপকরণ সমৃদ্ধ, তাকে বাফার জোন বলে।


    ট্রানজিশন জোন কি ?

    উত্তর: এটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এর সর্বাপেক্ষা বাইরের অঞ্চল যা বাফার জোনকে বেষ্টন করে অবস্থিত। এখানে রিজার্ভ পরিচালক ও স্থানীয় মানুষরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সহবস্থানে বসবাস করে। এই অঞ্চলে বসবাস, কৃষি, পশুচারণ, বনসৃজন, আনন্দ উপভোগ কার্যাবলী, অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ ইত্যাদি চলতে পারে যেগুলি পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধন করে না।


    এনডেনজারড বলতে কী বোঝো ?

    উত্তর: চরম সংকট পূর্ণ না হলেও যেসব ট্যাক্সন বিপন্ন অদূর ভবিষ্যতে অবলুপ্ত হতে পারে, তাদের এনডেনজারড স্পিসিস বলে।


    ভালনারেবল বলতে কী বোঝো ?

    উত্তর: যেসব ট্যাক্সন চরম সংকটপূর্ণ বা বিপন্ন নয়, কিন্তু অবলুপ্তির প্রবল সম্ভাবনা আছে, তাদের ভালনারেবল স্পিসিস বলে।


    অবলুপ্তির উপর ভিত্তি করে প্রজাতিকে কয় ভাগে এবং কি কি ভাগে ভাগ করা যায় ?

    উত্তর: অবলুপ্তির উপর ভিত্তি করে প্রজাতি কে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেগুলি হল — ১) ভালনারেবল, ২) এনডেনজারড, ৩) ক্রিটিকালি এনডেনজারড।



    কেমন লাগছে বিজ্ঞানবুক পড়তে? অবশ্যই জানান কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। আপনি কি Bigyanbook এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে এক্ষুনি ইউটিউবে গিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞানবুক এর ইউটিউব চ্যানেল। ফলো করুন বিজ্ঞানবুক -কে ফেসবুকে। শেয়ার করুন এই আর্টিকেলটি অন্যান্যদের সাথে। পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক। ধন্যবাদ।।

    Post a Comment (0)
    Previous Post Next Post

    My Favorites ❤️

    See your favorite posts by clicking the love icon at the top ❤️
    ⚠️
    AdBlocker Detected
    We noticed that you are using an AdBlocker.

    Our website is free to use, but we need ads to cover our server costs. Please disable your AdBlocker and reload the page to continue reading.