বর্ণালী কাকে বলে? (Definition of spectrum) by Bigyanbook

Text size: Text size slider

এই পেজে বা সাইটে কিছু খুঁজুন

নমস্কার! বিজ্ঞানবুক (Bigyanbook)-এর এই পেজে আপনাকে স্বাগত। আজ আমরা বিজ্ঞানের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি, যা আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে রঙিন করে তোলে – হ্যাঁ, আমরা কথা বলছি বর্ণালী (Spectrum) নিয়ে। চলুন, এই fascinating বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

বর্ণালী কাকে বলে? (Definition of spectrum) by Bigyanbook

বর্ণালী (Spectrum)

পদার্থবিজ্ঞান এবং আলোকবিজ্ঞানে বর্ণালী (Spectrum) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আলো বা অন্য কোনো তরঙ্গের বিভিন্ন উপাদানকে তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা কম্পাঙ্ক অনুসারে সাজালে যে বিন্যাস পাওয়া যায়, তাকেই বর্ণালী বলে। সাদা আলো আসলে বিভিন্ন রঙের আলোর সমষ্টি, যা আমরা প্রিজমের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।

বর্ণালী কাকে বলে?

যখন সাদা আলো বা অন্য কোনো মিশ্র আলোকরশ্মি কোনো প্রিজম, ডিফ্র্যাকশন গ্রেটিং বা অনুরূপ কোনো বিচ্ছুরক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন সেটি তার উপাদান বর্ণ বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। এই বিশ্লিষ্ট হওয়া আলোকরশ্মিগুলিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ক্রম অনুসারে সাজালে যে পটি বা বিন্যাস পাওয়া যায়, তাকে বর্ণালী বলে।

সাধারণত, আমরা দৃশ্যমান আলোর বর্ণালী বলতে লাল থেকে বেগুনী পর্যন্ত সাতটি মূল রং (বেনীআসহকলা – বেগুনী, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল) এবং তাদের বিভিন্ন শেডের সমাহারকে বুঝি। তবে বর্ণালী শুধু দৃশ্যমান আলোতেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের সম্পূর্ণ পরিসরকেই অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন – বেতার তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত রশ্মি, দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনী রশ্মি, এক্স-রে এবং গামা রশ্মি। প্রতিটি উপাদানের নিজস্ব স্বতন্ত্র বর্ণালী রয়েছে, যা অনেকটা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো।

বর্ণালীর প্রকারভেদ

বর্ণালি প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা:

  1. শুদ্ধ বর্ণালি (Pure Spectrum)
  2. অশুদ্ধ বর্ণালি (Impure Spectrum)

এখন আমরা এই দুই প্রকার বর্ণালী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো:

অশুদ্ধ বর্ণালী (Impure Spectrum) কাকে বলে?

যে বর্ণালিতে বিভিন্ন বর্ণগুলি একে অপরের উপর আপতিত হওয়ার ফলে কোনো বর্ণকেই পৃথক ও সুস্পষ্টভাবে চেনা যায় না, তাকে অশুদ্ধ বর্ণালী বলে। এই ধরনের বর্ণালীতে একটি রঙের আলো অন্য রঙের আলোর সাথে মিশে থাকে।

শুদ্ধ বর্ণালী (Pure Spectrum) কাকে বলে?

যে বর্ণালিতে বিভিন্ন বর্ণগুলি একে অপরের উপর আপতিত না হয়ে প্রত্যেকটি বর্ণকে পৃথক ও সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাকে শুদ্ধ বর্ণালী বলে। এখানে প্রতিটি বর্ণ নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত থাকে।

শুদ্ধ বর্ণালী ও অশুদ্ধ বর্ণালীর পার্থক্য (Difference between pure spectrum and impure spectrum)

শুদ্ধ বর্ণালী (Pure Spectrum) অশুদ্ধ বর্ণালী (Impure Spectrum)
আলোর উপাদান বর্ণগুলি (যেমন, সাদা আলোর সাতটি বর্ণ) স্পষ্টভাবে পৃথক পৃথক স্থান দখল করে। উপাদান বর্ণগুলি একে অপরের উপর আপতিত হওয়ায় পৃথক স্থান দখল করে না।
উপাদান বর্ণগুলিকে পরিষ্কার ও সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। উপাদান বর্ণগুলি অস্পষ্ট দেখায় এবং একে অপরের সাথে মিশে থাকে।
বর্ণগুলি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে (যেমন, বেনীআসহকলা বা VIBGYOR) পরপর সজ্জিত থাকে। বর্ণগুলি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সজ্জিত না থেকে একে অপরের সাথে মিশে থাকে।

উদাহরণ:

  • সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে আসে, তখন বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস (যেমন জলীয় বাষ্প, ওজোন) কিছু নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে।
  • সোডিয়াম বাষ্পের মধ্যে দিয়ে সাদা আলো পাঠালে, বর্ণালীতে দুটি নির্দিষ্ট স্থানে (যেখানে সোডিয়ামের হলুদ রেখা পাওয়ার কথা) কালো রেখা দেখা যায়। একে ফ্রনহফার রেখা বলা হয়, যা সূর্যের বর্ণালীতেও দেখা যায় কারণ সূর্যের আলোকরশ্মি তার নিজস্ব বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসার সময় কিছু অংশ শোষিত হয়।

এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে, আপনি আমাদের মূল পোস্টটি পড়তে পারেন: আরো পড়ুন

বর্ণালীর গুরুত্ব ও প্রয়োগ

বর্ণালী বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারি:

  • পদার্থের সনাক্তকরণ: প্রতিটি মৌল ও যৌগের নিজস্ব স্বতন্ত্র বর্ণালী রয়েছে। তাই কোনো অজানা নমুনার বর্ণালী বিশ্লেষণ করে তার উপাদান সম্পর্কে জানা যায়।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞান: দূরবর্তী নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোর বর্ণালী বিশ্লেষণ করে তাদের গঠন, তাপমাত্রা, গতি এবং দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • রসায়ন: রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং পদার্থের গঠন বিশ্লেষণে বর্ণালীমিতি (Spectrometry) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • চিকিৎসাবিজ্ঞান: রক্ত এবং অন্যান্য জৈব নমুনা বিশ্লেষণে বর্ণালীর ব্যবহার রয়েছে।
  • শিল্পক্ষেত্রে: বিভিন্ন দ্রব্যের গুণমান নিয়ন্ত্রণে (যেমন, খাদ্যের রং, কাপড়ের রং) বর্ণালী বিশ্লেষণ করা হয়।

মোটকথা, বর্ণালী হলো প্রকৃতির এক অসাধারণ ঘটনা, যা আমাদের পারিপার্শ্বিক জগৎ এবং মহাবিশ্বকে বুঝতে সাহায্য করে। বর্ণালীমাপক যন্ত্র (Spectrometer বা Spectroscope) ব্যবহার করে এই বর্ণালী পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়।


Last Updated: May 20, 2025
Share this page
Bigyanbook

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook whatsapp email

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post