ভারতীয় নৃত্যের প্রাণবন্ত চিত্রপট: ঐতিহ্য ও অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে এক যাত্রা

Text size: Text size slider

এই পেজে বা সাইটে কিছু খুঁজুন

ভারতীয় নৃত্যের প্রাণবন্ত চিত্রপট: ঐতিহ্য ও অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে এক যাত্

ভারতীয় নৃত্যের প্রাণবন্ত চিত্রপট: ঐতিহ্য ও অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে এক যাত্রা

ভারত, এক অতুলনীয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ, তার ভূখণ্ড ও ভাষার মতোই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ও প্রাচীন নৃত্যশৈলীর ঐতিহ্যে গর্বিত। ভারতীয় নৃত্য শুধুমাত্র বিনোদনের একটি মাধ্যম নয়; এটি একটি পবিত্র শিল্প, গল্প বলার মাধ্যম, উপাসনার একটি পদ্ধতি এবং স্বয়ং জীবনের এক প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি। শাস্ত্রীয় ঐতিহ্যের জটিল পদচালনা এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি থেকে শুরু করে লোকনৃত্যের উচ্ছল শক্তি পর্যন্ত, প্রতিটি শৈলী তার উৎপত্তি, বিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্যপূর্ণ এক অনন্য কাহিনী বর্ণনা করে। এই নিবন্ধটি ভারতীয় নৃত্যকলার মনোমুগ্ধকর জগতের গভীরে প্রবেশ করে এর ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য এবং স্থায়ী আবেদন অন্বেষণ করবে।

ভারতীয় নৃত্যের মূল: নাট্যশাস্ত্র

নৃত্য, সঙ্গীত এবং নাটক সহ সকল ভারতীয় শাস্ত্রীয় কলার ভিত্তিগত গ্রন্থ হলো নাট্যশাস্ত্র। ঋষি ভরত মুনির প্রতি এই প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থটি আরোপিত, যা ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সংকলিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি প্রদর্শন কলার একটি ব্যাপক সংকলন প্রদান করে। এতে মুদ্রা (হাতের ভঙ্গি), ভাব (অনুভূতি), রস (নান্দনিক অভিজ্ঞতা), শারীরিক সঞ্চালন, মঞ্চসজ্জা, পোশাক এবং রূপসজ্জার মতো দিকগুলি যত্নসহকারে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। নাট্যশাস্ত্র নৃত্যকে একটি ঐশ্বরিক সৃষ্টি হিসাবে বর্ণনা করে, যার লক্ষ্য দর্শকের মধ্যে রস সঞ্চার করা, যা নান্দনিক আনন্দের অবস্থায় নিয়ে যায়। এটি নৃত্যকে নৃত্ত (বিশুদ্ধ ছন্দময় নৃত্য), নৃত্য (অর্থ ও আবেগ প্রকাশকারী ভাবপূর্ণ নৃত্য), এবং নাট্য (নাটকীয় উপস্থাপনা) এই তিন ভাগে বিভক্ত করে।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যকলা: ঐতিহ্যের স্তম্ভ

সঙ্গীত নাটক আকাদেমি, ভারতের সঙ্গীত, নৃত্য এবং নাটকের জাতীয় আকাদেমি, আনুষ্ঠানিকভাবে আটটি শাস্ত্রীয় নৃত্যকলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই নৃত্যশৈলীগুলি ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত, কঠোর প্রশিক্ষণ, পরিশীলিত কৌশল এবং গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। প্রতিটির একটি স্বতন্ত্র শৈলী, পোশাক, সঙ্গীত এবং বিষয়ভিত্তিক কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে, যা প্রায়শই রামায়ণ ও মহাভারতের মতো হিন্দু মহাকাব্য, পুরাণ এবং শাস্ত্রীয় সাহিত্য থেকে গৃহীত হয়।

১. ভরতনাট্যম (তামিলনাড়ু)

ভরতনাট্যম, তামিলনাড়ুর মন্দিরগুলিতে উদ্ভূত, প্রাচীনতম এবং সর্বাধিক প্রচলিত শাস্ত্রীয় নৃত্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি তার সুনির্দিষ্ট পদচালনা (আডভু), ভাস্কর্যসম ভঙ্গি (করণ), জটিল হস্তমুদ্রা (মুদ্রা), এবং জীবন্ত মুখভঙ্গি (অভিনয়)-এর জন্য পরিচিত। নামটি কখনও কখনও এইভাবে ভেঙে দেখানো হয়: ভ (ভাব - অনুভূতি), র (রাগ - সুর), ত (তাল - ছন্দ), এবং নাট্যম (নৃত্য)। এর বিষয়বস্তু প্রায়শই শৈববাদ, বৈষ্ণববাদ এবং শাক্তধর্মকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। পোশাক সাধারণত একটি উজ্জ্বল রেশম শাড়ি, যা জটিলভাবে ভাঁজ করা এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দির গহনা দ্বারা সজ্জিত থাকে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ই. কৃষ্ণ আইয়ার এবং রুক্মিণী দেবী অরুণ্ডেলের মতো ব্যক্তিত্বদের দ্বারা এর পুনরুজ্জীবন আধুনিক যুগে এর খ্যাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

২. কত্থক (উত্তর ভারত - উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান)

কত্থক, যার অর্থ "কথক" বা গল্পকার (কথা থেকে), উত্তর ভারতে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানে বিকশিত হয়েছিল। এটি ঐতিহ্যগতভাবে মন্দিরে পরিভ্রমণকারী চারণকবিদের দ্বারা পরিবেশিত হতো এবং পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট এবং হিন্দু রাজাদের রাজদরবারে সমৃদ্ধি লাভ করে। কত্থক তার দ্রুত ঘূর্ণন ( चक्कर), নূপুর (ঘুঙরু) পরিহিত অবস্থায় সম্পাদিত জটিল ছন্দময় পদচালনা (তৎকার), এবং সূক্ষ্ম, লাবণ্যময় গতিবিধির জন্য পরিচিত। এটি হিন্দু ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলির একটি অনন্য মিশ্রণ। কত্থকের তিনটি প্রধান ঘরানা (শিক্ষ派) রয়েছে: লখনউ, জয়পুর এবং বারাণসী, প্রতিটির নিজস্ব স্বতন্ত্র শৈলীগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অভিনয়-এর মাধ্যমে ভাবপূর্ণ গল্প বলা এর একটি মূল উপাদান।

৩. কথাকলি (কেরালা)

কথাকলি, কেরালা থেকে আগত, একটি অত্যন্ত নাটকীয় এবং শৈলীযুক্ত নৃত্য-নাট্য। "কথা" মানে গল্প, এবং "কলি" মানে খেলা বা অভিনয়। এটি তার বিস্তৃত, প্রাণবন্ত রূপসজ্জা (আহার্য অভিনয়), বিশাল মস্তকাবরণ, এবং বিপুল আয়তনের পোশাকের জন্য বিখ্যাত, যা অভিনয়শিল্পীদের পুরাণ ও মহাকাব্যের চরিত্রগুলিতে রূপান্তরিত করে। রূপসজ্জা রঙ-ভিত্তিক হয়, যেখানে সবুজ রঙ বীর বা ঐশ্বরিক চরিত্র (পচ্চা), লাল রঙ অশুভ (কাথী), এবং কালো রঙ বনবাসী বা শিকারী (করী)-দের বোঝায়। গতিবিধিগুলি শক্তিশালী এবং গতিশীল, যার জন্য 엄청 শারীরিক শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। গল্প বলা মূলত বিশদ মুখমণ্ডলীয় অভিব্যক্তি, বিশেষ করে চোখের নড়াচড়া, এবং জটিল হস্তমুদ্রার উপর নির্ভর করে, যা শক্তিশালী তালবাদ্য দ্বারা সঙ্গত হয়।

৪. কুচিপুডি (অন্ধ্রপ্রদেশ)

অন্ধ্রপ্রদেশের কুচিপুডি গ্রামে উদ্ভূত, কুচিপুডি ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী দ্বারা পরিবেশিত হতো। এটি ভরতনাট্যমের সাথে অনেক উপাদান ভাগ করে নেয় তবে এর নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন আরও গোলাকার এবং সাবলীল গতিবিধি, এবং তরঙ্গম-এর অনন্য ঐতিহ্য, যেখানে নৃত্যশিল্পী একটি পিতলের থালার কিনারায় নৃত্য পরিবেশন করেন, প্রায়শই মাথায় জলের পাত্র ভারসাম্য রেখে। কুচিপুডি নৃত্ত, নৃত্য, এবং নাট্য-কে একত্রিত করে, প্রায়শই কথ্য সংলাপ এবং কর্ণাটকী সঙ্গীত অন্তর্ভুক্ত করে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গর্বিত এবং আত্মবিশ্বাসী সঙ্গী সত্যভামা কুচিপুডি পরিবেশনার একটি প্রমুখ চরিত্র।

৫. ওড়িশি (ওড়িশা)

পূর্ব ভারতের ওড়িশা থেকে আগত ওড়িশি নৃত্য, প্রাচীনতম টিকে থাকা নৃত্যগুলির মধ্যে অন্যতম, যার প্রমাণ কোণার্কের সূর্য মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো মন্দিরের ভাস্কর্যে পাওয়া যায়। এটি তার গীতিময় কমনীয়তা, ইন্দ্রিয়পরতা এবং সাবলীল গতিবিধি, বিশেষ করে ত্রিভঙ্গী (শরীরের তিনটি বাঁক – মাথা, ধড় এবং নিতম্ব) এবং চৌকা (একটি বর্গাকার ভঙ্গি)-এর জন্য পরিচিত। বিষয়বস্তু প্রায়শই ভক্তিমূলক হয়, যা ভগবান জগন্নাথ (কৃষ্ণের একটি রূপ) এবং রাধাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। পোশাক মার্জিত, এবং নর্তকীরা স্বতন্ত্র রূপার তারের কাজ করা গয়না পরেন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নিবেদিত গুরু এবং পণ্ডিতদের দ্বারা ওড়িশি নৃত্যের পুনরুজ্জীবন ঘটে।

৬. মণিপুরী (মণিপুর)

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর থেকে আগত মণিপুরী নৃত্য একটি সূক্ষ্ম, গীতিময় এবং লাবণ্যময় গুণাবলিতে পরিপূর্ণ। এটি এই অঞ্চলের ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামোর সাথে গভীরভাবে জড়িত, প্রধানত রাধা ও কৃষ্ণের দিব্য প্রেমলীলা অর্থাৎ রাসলীলা চিত্রিত করে। এর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো মহিলা নর্তকীদের পরিহিত নলাকার, শক্ত এবং বিস্তৃতভাবে এমব্রয়ডারি করা স্কার্ট, যাকে পোতলোই বা কুমিল বলা হয়, এবং মৃদু, তরঙ্গায়িত গতিবিধি যা তীক্ষ্ণ ঝাঁকুনি বা জোরালো পদধ্বনি এড়িয়ে চলে। পুং (একটি ঢোলক জাতীয় বাদ্য) এবং বাঁশি হলো প্রধান সহযোগী বাদ্যযন্ত্র। পুরুষদের পরিবেশনা, যেমন পুং চোলোম (ঢোল নৃত্য) এবং কর্তাল চোলোম (করতাল নৃত্য), জোরালো এবং অ্যাক্রোব্যাটিক হয়।

৭. মোহিনীঅট্টম (কেরালা)

কেরালার আরও একটি নৃত্যশৈলী হলো মোহিনীঅট্টম, "মোহনীয়ার নৃত্য" (মোহিনী, বিষ্ণুর এক অবতার)। এটি একটি লাবণ্যময়, মেয়েলি একক নৃত্যশৈলী, যা শরীরের ঊর্ধ্বাংশের মৃদু দোলানো গতিবিধি, সূক্ষ্ম মুখভঙ্গি এবং মার্জিত হস্তমুদ্রা দ্বারা চিহ্নিত। পোশাক সাধারণত একটি সাদা বা অফ-হোয়াইট শাড়ি সোনালী পাড় (কাসাভু) সহ, এবং চুল জুঁই ফুল দিয়ে সজ্জিত খোঁপা করে বাঁধা হয়। এটি ভরতনাট্যম এবং কথাকলির উপাদানগুলিকে একত্রিত করে তবে এর একটি স্বতন্ত্র, নরম নান্দনিকতা রয়েছে, প্রায়শই নৃত্যের লাস্য (কমনীয়) দিকগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সঙ্গীত কর্ণাটকী এবং বিষয়বস্তু ভক্তিমূলক।

৮. সত্রীয়া (আসাম)

সত্রীয়া নৃত্য আসামের সত্র (বৈষ্ণব মঠ) থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যা পঞ্চদশ শতাব্দীর ভক্তিবাদী সাধক ও পণ্ডিত শ্রীমন্ত শঙ্করদেব দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে পুরুষ সন্ন্যাসী (ভকত) দ্বারা ধর্মীয় আচারের অংশ হিসাবে এটি পরিবেশিত হতো, এখন এটি মহিলা এবং ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চেও পরিবেশিত হয়। সত্রীয়া নৃত্যের মধ্যে বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যেমন অঙ্কীয়া নাট (একাঙ্ক নাটক), ওজাপালি, এবং নির্দিষ্ট নৃত্যানুষ্ঠান। এটি তার ভক্তিমূলক বিষয়বস্তু, লাবণ্যময় অথচ শক্তিশালী গতিবিধি, এবং আসামের পাট সিল্কের তৈরি স্বতন্ত্র পোশাকের জন্য পরিচিত। এর সঙ্গীত, যা বরগীত নামে পরিচিত, এই ঐতিহ্যের একটি অনন্য অংশ।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় ও আধা-শাস্ত্রীয় নৃত্য: ছৌ

এই আটটি নৃত্য ছাড়াও, ছৌ নৃত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধা-শাস্ত্রীয় ভারতীয় নৃত্য, যার উৎস যুদ্ধকৌশল, উপজাতীয় এবং লোক ঐতিহ্যে নিহিত। এর তিনটি প্রধান শৈলী রয়েছে, যা তাদের উৎপত্তিস্থলের নামে নামকরণ করা হয়েছে: সরাইকেল্লা ছৌ (ঝাড়খণ্ড), ময়ূরভঞ্জ ছৌ (ওড়িশা), এবং পুরুলিয়া ছৌ (পশ্চিমবঙ্গ)। সরাইকেল্লা এবং পুরুলিয়া ছৌতে বিস্তৃত মুখোশ ব্যবহৃত হয়, যেখানে ময়ূরভঞ্জ ছৌ মুখোশ ছাড়াই পরিবেশিত হয়। ছৌ তার শক্তিশালী গতিবিধি, অ্যাক্রোব্যাটিক লাফ, এবং মহাকাব্যিক বিষয়বস্তুর চিত্রায়নের জন্য পরিচিত, যা প্রায়শই বসন্ত উৎসবের সময় পরিবেশিত হয়।

ভারতের লোকনৃত্য: জনগণের স্পন্দন

ভারতের লোকনৃত্যগুলি তার শাস্ত্রীয় নৃত্যগুলির মতোই বৈচিত্র্যপূর্ণ, যা অসংখ্য সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন, আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব এবং বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে। এই নৃত্যগুলি সাধারণত দলবদ্ধভাবে পরিবেশিত হয়, সরল পদক্ষেপ, প্রাণবন্ত পোশাক এবং উদ্যমী সঙ্গীত দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এগুলি সামাজিক সমাবেশ, কৃষি চক্র এবং ধর্মীয় উদযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কিছু বিশিষ্ট লোকনৃত্য হলো:

  • ভাংড়া ও গিদ্ধা (পাঞ্জাব): ফসল কাটা (বৈশাখী) এবং অন্যান্য উৎসব উদযাপনের জন্য পরিবেশিত উদ্যমী ও আনন্দদায়ক নৃত্য। ভাংড়া পুরুষদের দ্বারা এবং গিদ্ধা মহিলাদের দ্বারা পরিবেশিত হয়।
  • গরবা ও ডান্ডিয়া রাস (গুজরাট): नवरात्रि-র সময় পরিবেশিত হয়। গরবাতে তালি দিয়ে বৃত্তাকার গতিতে নাচা হয়, অন্যদিকে ডান্ডিয়া রাসে সজ্জিত লাঠি ব্যবহৃত হয়।
  • বিহু (আসাম): বিহু উৎসব উদযাপনের জন্য একটি প্রাণবন্ত দলীয় নৃত্য, যা অসমীয়া নববর্ষ এবং ফসল কাটার প্রতীক।
  • লাবণী (মহারাষ্ট্র): একটি গতিশীল এবং আবেদনময়ী গান ও নাচের আঙ্গিক, যা প্রায়শই প্রেম এবং সামাজিক ভাষ্য নিয়ে আলোচনা করে এবং ঢোলকির তালে পরিবেশিত হয়।
  • ঘুমর (রাজস্থান): প্রধানত উৎসব এবং বিবাহে মহিলারা বিস্তৃত ঘাঘরা পরে এই লাবণ্যময় বৃত্তাকার নৃত্য পরিবেশন করেন।
  • কালবেলিয়া (রাজস্থান): কালবেলিয়া (সাপুড়ে) সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিবেশিত এই আবেদনময়ী নৃত্য সাপের গতিবিধি অনুকরণ করে।
  • ডল্লু কুনিথা (কর্নাটক): কুরুবা সম্প্রদায়ের পুরুষদের দ্বারা পরিবেশিত একটি শক্তিশালী ড্রাম নৃত্য, যাতে অ্যাক্রোব্যাটিক গতিবিধি এবং ছন্দময় ড্রামিং জড়িত।
  • করগাট্টম (তামিলনাড়ু): একটি লোকনৃত্য যেখানে অভিনয়শিল্পীরা তাদের মাথায় সজ্জিত কলস ভারসাম্য রেখে দক্ষতা ও ভক্তি প্রদর্শন করেন।
  • থিরায়ট্টম (কেরালা): দক্ষিণ মালাবারের একটি আনুষ্ঠানিক পরিবেশন শিল্পকলা, যেখানে অভিনয়শিল্পীরা দেবতাদের মূর্ত প্রতীক হিসাবে বিস্তৃত মুখোশ এবং পোশাক পরেন।

ভারতীয় নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের তালিকা

বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নাম নৃত্যের নাম
বিরজু মহারাজ কথক
কেলুচরণ মহাপাত্র ওড়িশি
রুক্মিণী দেবী অরুণ্ডেল ভরতনাট্যম
গুরু বিপিন সিংহ মণিপুরী
ভেম্পতি চিন্না সত্যম কুচিপুড়ি
কলামণ্ডলম গোপী কথাকলি
পদ্ম সুব্রহ্মণ্যম ভরতনাট্যম
সোনাল মানসিংহ ভরতনাট্যম, ওড়িশি
মল্লিকা সারাভাই কুচিপুড়ি, ভরতনাট্যম
শোভনা নারায়ণ কথক
উদয় শঙ্কর সৃজনশীল নৃত্য (ফিউশন)
ইয়ামিনী কৃষ্ণমূর্তি ভরতনাট্যম, কুচিপুড়ি
মৃণালিনী সারাভাই ভরতনাট্যম, কথাকলি
সংযুক্তা পাণিগ্রাহী ওড়িশি
সিতারা দেবী কথক
জাভেরি বোনেরা (দর্শনা, নয়না, সুবর্ণা, রঞ্জনা) মণিপুরী
টি. বালাসরস্বতী ভরতনাট্যম
শম্ভু মহারাজ কথক
লচ্ছূ মহারাজ কথক
গুরু গোপীনাথ কথাকলি, কেরল নর্তনম (সৃষ্টিকর্তা)
কলামণ্ডলম কৃষ্ণন নায়ার কথাকলি
কোট্টাক্কাল শিবরামন কথাকলি
মায়াধর রাউত ওড়িশি
গুরু পঙ্কজ চরণ দাস ওড়িশি
রাজা রেড্ডি ও রাধা রেড্ডি কুচিপুড়ি
কলামণ্ডলম কল্যাণীকুট্টি আম্মা মোহিনীঅট্টম
চিত্রা বিশ্বেশ্বরণ ভরতনাট্যম
অলরমেল ভাল্লী ভরতনাট্যম (পাঞ্চানাল্লুর শৈলী)
মাধবী মুদগল ওড়িশি
লীলা স্যামসন ভরতনাট্যম
কুমুদিনী লাখিয়া কথক
গুরু আমুবি সিংহ মণিপুরী
রাজকুমার সিংহজিৎ সিংহ মণিপুরী
ইন্দ্রাণী রহমান ভরতনাট্যম, কুচিপুড়ি, কথাকলি, ওড়িশি
কণক রেলে মোহিনীঅট্টম
শোভা নাইডু কুচিপুড়ি
অস্তাদ দেবু সৃজনশীল সমসাময়িক নৃত্য
সুধা চন্দ্রন ভরতনাট্যম
রোশেন কুমারী কথক
স্বপনসুন্দরী কুচিপুড়ি
গুরু দেবপ্রসাদ দাস ওড়িশি
ভারতী শিবাজী মোহিনীঅট্টম
জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (সাত্ত্বিক) সাত্ত্রিয়া
ইন্দিরা পি. পি. বোরা সাত্ত্রিয়া, ভরতনাট্যম
অনিটা রত্নম সমসাময়িক নৃত্য (ভরতনাট্যম ভিত্তিক)
মমতা শংকর সৃজনশীল নৃত্য
তনুশ্রী শংকর সৃজনশীল নৃত্য
অমলা শংকর সৃজনশীল নৃত্য
ইলেনা সিতারিস্টী ওড়িশি, ছৌ



ভারতের প্রায় প্রতিটি অঞ্চল এবং সম্প্রদায়ের নিজস্ব অনন্য লোকনৃত্য ঐতিহ্য রয়েছে, যা ভারতীয় নৃত্যের অবিশ্বাস্য বৈচিত্র্যে অবদান রাখে।

ভারতীয় নৃত্যের মূল ধারণা

বেশ কয়েকটি মূল ধারণা বেশিরভাগ ভারতীয় নৃত্যশৈলীর, বিশেষ করে শাস্ত্রীয় নৃত্যগুলির ভিত্তি স্থাপন করে:

  • অভিনয় (ভাবপ্রকাশ): আবেগ এবং আখ্যান жетানোর কলা। এর চারটি দিক রয়েছে:
    • আঙ্গিক অভিনয়: অঙ্গভঙ্গি, ভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তি সহ শারীরিক নড়াচড়ার মাধ্যমে প্রকাশ।
    • বাচিক অভিনয়: বক্তৃতা, গান বা আবৃত্তির মাধ্যমে প্রকাশ।
    • আহার্য অভিনয়: পোশাক, রূপসজ্জা এবং মঞ্চসজ্জার মাধ্যমে প্রকাশ।
    • সাত্ত্বিক অভিনয়: অভিনয়কারীর দ্বারা প্রকৃত মানসিক অবস্থার প্রকাশ, যেমন অশ্রু, কম্পন বা রোমাঞ্চ।
  • মুদ্রা (হস্তভঙ্গি): প্রতীকী হস্তভঙ্গি যা বস্তু, ক্রিয়া, আবেগ বা দেবতাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এখানে অসংযুক্ত হস্ত (একক হস্তভঙ্গি) এবং সংযুক্ত হস্ত (দ্বৈত হস্তভঙ্গি) রয়েছে।
  • রস (নান্দনিক অনুভূতি): দর্শকের মধ্যে সঞ্চারিত হওয়া মানসিক স্বাদ বা অনুভূতি। নাট্যশাস্ত্রে আটটি প্রধান রসের তালিকা রয়েছে: শৃঙ্গার (প্রেম/সৌন্দর্য), হাস্য (হাসি), করুণা (দুঃখ), রৌদ্র (ক্রোধ), বীর (বীরত্ব), भयानक (ভয়), বীভৎস (ঘৃণা), এবং অদ্ভুত (বিস্ময়)। শান্ত (শান্তি) রস পরে যুক্ত হয়েছিল।
  • ভাব (আবেগ): নৃত্যশিল্পী দ্বারা প্রদর্শিত আবেগ যা রসের উদ্রেক করতে সহায়ক হয়।
  • তাল (ছন্দ) এবং লয় (গতি): নৃত্যের ছন্দবদ্ধ কাঠামো এবং গতি, যা নৃত্ত এবং নৃত্য উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

বিবর্তন, পুনরুজ্জীবন এবং আধুনিক প্রেক্ষাপট

ভারতীয় নৃত্য ঐতিহ্য হাজার হাজার বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে, প্রাচীন মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান এবং লোকচর্চা থেকে শুরু করে পরিশীলিত রাজদরবারের বিনোদন পর্যন্ত। ঔপনিবেশিক আমলে, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং সামাজিক পরিবর্তনের কারণে অনেক শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। যাইহোক, বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময়ে একটি অসাধারণ নবজাগরণ ঘটেছিল, যেখানে নিবেদিত শিল্পী, পণ্ডিত এবং পৃষ্ঠপোষকগণ এই শিল্পকলাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত ও জনপ্রিয় করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। এই পুনরুজ্জীবন আন্দোলন কেবল প্রাচীন ঐতিহ্যকেই সংরক্ষণ করেনি, আধুনিক প্রেক্ষাপটে মঞ্চের জন্য সেগুলিকে অভিযোজিতও করেছে।

আজ, ভারতীয় নৃত্য ক্রমাগত সমৃদ্ধ ও বিকশিত হচ্ছে। শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীগুলি বিশ্বব্যাপী শেখানো এবং পরিবেশিত হয়। সমসাময়িক ভারতীয় নৃত্য পরিচালকরা ঐতিহ্যবাহী শব্দভাণ্ডার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, নতুন বিষয়বস্তু অন্বেষণ করছেন এবং বিভিন্ন ঘরানার মধ্যে সহযোগিতা করছেন। বলিউড নৃত্য, বিভিন্ন ভারতীয় লোক ও শাস্ত্রীয় শৈলীর সাথে পশ্চিমা প্রভাবের এক প্রাণবন্ত মিশ্রণ, একটি বিশ্বব্যাপী ঘটনা হয়ে উঠেছে, যা ভারতীয় গতিবিধির গতিশীলতাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।

উপসংহার: ভারতীয় নৃত্যের স্থায়ী উত্তরাধিকার

ভারতীয় নৃত্য ঐতিহ্য দেশের গভীর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক গভীরতার এক জীবন্ত, শ্বাসপ্রশ্বাসপূর্ণ প্রমাণ। শাস্ত্রীয় নৃত্যের শৃঙ্খলাবদ্ধ কমনীয়তা হোক বা লোকনৃত্যের বাধাহীন আনন্দ, ভারতীয় নৃত্যকলাগুলি ভারতের আত্মার একটি জানালা খুলে দেয়। এগুলি কেবল শৈল্পিক অভিব্যক্তি নয়; এগুলি ইতিহাস, পুরাণ এবং মানব অভিজ্ঞতার আখ্যান, যা অতীতকে বর্তমানের সাথে সংযুক্ত করে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছে। এই নৃত্যগুলিতে অন্তর্নিহিত জটিল ছন্দ, অভিব্যক্তিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি এবং প্রাণবন্ত গল্প বলার ভঙ্গি বিশ্বের সবচেয়ে পরিশীলিত এবং চিত্তাকর্ষক ভারতীয় শিল্পকলার অন্যতম হিসাবে তাদের স্থায়ী উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে।


Last Updated: May 29, 2025
Share this page
Bigyanbook

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook whatsapp email

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post