এই পেজে বা সাইটে কিছু খুঁজুন
বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় যেমন SSC CGL, CHSL, MTS, BANK, IBPS, RRB ইত্যাদিতে সফল হতে গেলে অংকের প্রশ্নগুলি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষায় সময় সীমিত থাকায়, প্রচলিত দীর্ঘ পদ্ধতির পরিবর্তে শর্টকাট ট্রিকস জানা থাকলে আপনি অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। এই আর্টিকেলে, আমরা সিলেবাস অনুযায়ী বিভিন্ন অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ শর্টকাট ট্রিকস নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে কম সময়ে সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

Number System (সংখ্যা পদ্ধতি)
ট্রিক ১: প্রথম n সংখ্যক স্বাভাবিক সংখ্যার যোগফল নির্ণয়
সূত্র:
ব্যাখ্যা: যদি আপনাকে ১ থেকে শুরু করে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা (n) পর্যন্ত সমস্ত স্বাভাবিক সংখ্যার যোগফল বের করতে বলা হয়, তাহলে এই সূত্রটি ব্যবহার করুন। এখানে n হলো শেষ সংখ্যা।
উদাহরণ ১: প্রথম ৫০টি স্বাভাবিক সংখ্যার যোগফল কত?
সমাধান: এখানে n = ৫০। সূত্র অনুযায়ী, যোগফল = ৫০ × (৫০ + ১) / ২ = (৫০ × ৫১) / ২ = ২৫ × ৫১ = ১২৭৫।
উদাহরণ ২: ১ + ২ + ৩ + ... + ১০০ = কত?
সমাধান: এখানে n = ১০০। সূত্র অনুযায়ী, যোগফল = ১০০ × (১০০ + ১) / ২ = (১০০ × ১০১) / ২ = ৫০ × ১০১ = ৫০৫০।
ট্রিক ২: বড় সংখ্যার পাওয়ারের একক স্থানীয় অঙ্ক (Unit Digit) নির্ণয়
ব্যাখ্যা: (XYZ)n এর মতো বড় সংখ্যার একক স্থানীয় অঙ্ক বের করার জন্য, শুধুমাত্র একক স্থানীয় অঙ্কের (Z) পাওয়ার n নিয়ে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে একটি সহজ নিয়ম হলো, পাওয়ার (n) কে ৪ দিয়ে ভাগ করুন এবং ভাগশেষটি Z-এর নতুন পাওয়ার হিসেবে ব্যবহার করুন।
নিয়ম:
- যদি ভাগশেষ ১ হয়, একক অঙ্ক হবে Z1।
- যদি ভাগশেষ ২ হয়, একক অঙ্ক হবে Z2।
- যদি ভাগশেষ ৩ হয়, একক অঙ্ক হবে Z3।
- যদি ভাগশেষ ০ হয়, একক অঙ্ক হবে Z4।
ব্যতিক্রম: যদি সংখ্যার একক অঙ্ক ০, ১, ৫ বা ৬ হয়, তাহলে তার পাওয়ার যাই হোক না কেন, একক অঙ্ক অপরিবর্তিত থাকবে।
উদাহরণ ১: (১৩৭)৭৩ এর একক স্থানীয় অঙ্ক কত?
সমাধান: এখানে একক অঙ্ক ৭ এবং পাওয়ার ৭৩। পাওয়ার ৭৩ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হয় ১ (৭৩ = ৪ × ১৮ + ১)। সুতরাং, একক অঙ্ক হবে ৭১ = ৭।
উদাহরণ ২: (২২)২৩ এর একক স্থানীয় অঙ্ক কত?
সমাধান: পাওয়ার ২৩ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হয় ৩ (২৩ = ৪ × ৫ + ৩)। সুতরাং, একক অঙ্ক হবে ২৩ = ৮।
HCF and LCM (গ.সা.গু এবং ল.সা.গু)ট্রিক ১: দুটি সংখ্যার গুণফল তাদের গ.সা.গু এবং ল.সা.গু-এর গুণফলের সমান
সূত্র:
ব্যাখ্যা: এই সূত্র ব্যবহার করে দুটি সংখ্যার মধ্যে যেকোনো তিনটি মান জানা থাকলে চতুর্থ মানটি সহজেই বের করা যায়।
উদাহরণ: দুটি সংখ্যার গ.সা.গু ১১ এবং ল.সা.গু ৭৭০০। যদি একটি সংখ্যা ২৭৫ হয়, তবে অন্য সংখ্যাটি কত?
সমাধান: ধরা যাক অন্য সংখ্যাটি x। সূত্র অনুযায়ী, ২৭৫ × x = ১১ × ৭৭০০। অতএব, x = (১১ × ৭৭০০) / ২৭৫ = ৩০৮।
ট্রিক ২: ভগ্নাংশের গ.সা.গু এবং ল.সা.গু নির্ণয়
সূত্র (গ.সা.গু):
সূত্র (ল.সা.গু):
উদাহরণ: ১/২, ৩/৪ এবং ৫/৬ এর গ.সা.গু এবং ল.সা.গু নির্ণয় করুন।
সমাধান:
HCF = HCF(১, ৩, ৫) / LCM(২, ৪, ৬) = ১/১২।
LCM = LCM(১, ৩, ৫) / HCF(২, ৪, ৬) = ১৫/২।
ট্রিক ১: পুনরাবৃত্তিমূলক বর্গমূল (Recurring Square Roots)
কেস ১: যদি রাশিটি √(x + √(x + √(x...∞))) এই আকারে থাকে, তবে উত্তর হবে দুটি ক্রমিক উৎপাদকের মধ্যে বড়টি, যেখানে x = n(n+1)।
কেস ২: যদি রাশিটি √(x - √(x - √(x...∞))) এই আকারে থাকে, তবে উত্তর হবে দুটি ক্রমিক উৎপাদকের মধ্যে ছোটটি, যেখানে x = n(n+1)।
উদাহরণ ১: √(১২ + √(১২ + √(১২...∞))) এর মান কত?
সমাধান: এখানে ১২ = ৩ × ৪। যেহেতু + চিহ্ন আছে, উত্তর হবে বড় উৎপাদকটি, অর্থাৎ ৪।
উদাহরণ ২: √(৫৬ - √(৫৬ - √(৫৬...∞))) এর মান কত?
সমাধান: এখানে ৫৬ = ৭ × ৮। যেহেতু - চিহ্ন আছে, উত্তর হবে ছোট উৎপাদকটি, অর্থাৎ ৭।
Average (গড়)ট্রিক ১: কোনো গ্রুপে নতুন সদস্য যোগ দিলে বা ছেড়ে গেলে নতুন গড়
ব্যাখ্যা: এই ধরনের অঙ্ক মুখে মুখে করা যায়। যদি নতুন সদস্যের বয়স/ওজন/সংখ্যা গড়ের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে নতুন গড় বাড়বে। আর যদি কম হয়, তাহলে গড় কমবে।
উদাহরণ: ১০ জন ছাত্রের গড় বয়স ১৫ বছর। যদি ২০ বছর বয়সী একজন নতুন ছাত্র যোগ দেয়, তাহলে নতুন গড় কত হবে?
সমাধান: পুরোনো গড় ১৫। নতুন ছাত্রের বয়স (২০) গড়ের থেকে ৫ বেশি। এই অতিরিক্ত ৫ এখন ১১ জনের মধ্যে ভাগ হবে। সুতরাং, গড় বৃদ্ধি পাবে = ৫/১১ ≈ ০.৪৫। নতুন গড় = ১৫ + ০.৪৫ = ১৫.৪৫ বছর।
Percentage (শতাংশ)ট্রিক ১: ধারাবাহিক শতাংশ পরিবর্তন (Successive Percentage Change)
সূত্র:
ব্যাখ্যা: যদি কোনো রাশির মান প্রথমে x% এবং পরে y% পরিবর্তন হয়, তাহলে মোট পরিবর্তন এই সূত্র দিয়ে বের করা যায়। বৃদ্ধির জন্য (+) এবং হ্রাসের জন্য (-) চিহ্ন ব্যবহার করুন।
উদাহরণ: একটি দ্রব্যের দাম প্রথমে ২০% বাড়ল এবং পরে ১০% কমল। মোট দামের পরিবর্তন কত?
সমাধান: এখানে x = +২০ এবং y = -১০।
মোট পরিবর্তন = ২০ + (-১০) + (২০ × -১০) / ১০০ = ১০ - ২০০/১০০ = ১০ - ২ = ৮%।
অর্থাৎ, দাম মোট ৮% বেড়েছে।
ট্রিক ১: যখন দুটি দ্রব্য একই বিক্রয়মূল্যে বিক্রি হয়
ব্যাখ্যা: যদি দুটি দ্রব্য একই বিক্রয়মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং একটিতে x% লাভ ও অন্যটিতে x% ক্ষতি হয়, তাহলে মোটের উপর সবসময় ক্ষতি হবে।
সূত্র (ক্ষতির হার):
উদাহরণ: একজন দোকানদার দুটি ঘড়ি প্রতিটি ৯৯০ টাকায় বিক্রি করলেন। একটিতে তার ১০% লাভ হলো এবং অন্যটিতে ১০% ক্ষতি হলো। মোটের উপর তার লাভ বা ক্ষতি কত?
সমাধান: এখানে x = ১০।
মোট ক্ষতি % = (১০)২ / ১০০ = ১০০/১০০ = ১%।
ট্রিক ১: ২ বছরের জন্য চক্রবৃদ্ধি সুদ (CI) এবং সরল সুদের (SI) পার্থক্য
সূত্র:
ব্যাখ্যা: P হলো আসল, R হলো সুদের হার।
উদাহরণ: ৫০০০ টাকার উপর ১০% হারে ২ বছরের চক্রবৃদ্ধি ও সরল সুদের পার্থক্য কত?
সমাধান: পার্থক্য = ৫০০০ × (১০/১০০)২ = ৫০০০ × (১/১০)২ = ৫০০০ × ১/১০০ = ৫০ টাকা।
ট্রিক ২: ৩ বছরের জন্য চক্রবৃদ্ধি সুদ (CI) এবং সরল সুদের (SI) পার্থক্য
সূত্র:
উদাহরণ: ৮০০০ টাকার উপর ৫% হারে ৩ বছরের চক্রবৃদ্ধি ও সরল সুদের পার্থক্য কত?
সমাধান: পার্থক্য = ৮০০০ × (৫/১০০)২ × (৩ + ৫/১০০) = ৮০০০ × (১/২০)২ × (৩ + ১/২০) = ৮০০০ × (১/৪০০) × (৬১/২০) = ২০ × ৬১/২০ = ৬১ টাকা।
Work and Time (কার্য ও সময়)ট্রিক ১: LCM পদ্ধতি (ইউনিট ধরে কাজ)
ব্যাখ্যা: কে কত দিনে কাজ করে, সেই দিনগুলোর ল.সা.গু (LCM) নিয়ে মোট কাজের পরিমাণ (Total Work Unit) ধরে নেওয়া হয়। এরপর প্রত্যেকের একদিনের কাজের পরিমাণ (efficiency) বের করে অঙ্ক করা হয়।
উদাহরণ: A একটি কাজ ১০ দিনে এবং B সেই কাজটি ১৫ দিনে করতে পারে। তারা একসাথে কাজটি কত দিনে শেষ করবে?
সমাধান:
১. মোট কাজ = LCM(১০, ১৫) = ৩০ ইউনিট।
২. A-এর একদিনের কাজ (efficiency) = ৩০/১০ = ৩ ইউনিট/দিন।
৩. B-এর একদিনের কাজ (efficiency) = ৩০/১৫ = ২ ইউনিট/দিন।
৪. একসাথে তাদের একদিনের কাজ = ৩ + ২ = ৫ ইউনিট/দিন।
৫. কাজটি শেষ করতে সময় লাগবে = মোট কাজ / একদিনের কাজ = ৩০ / ৫ = ৬ দিন।
ট্রিক ১: গড় গতিবেগ (Average Speed)
ব্যাখ্যা: যদি কোনো ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব x কিমি/ঘণ্টা বেগে যান এবং একই দূরত্ব y কিমি/ঘণ্টা বেগে ফিরে আসেন, তাহলে সম্পূর্ণ যাত্রাপথে তার গড় গতিবেগ হবে:
সূত্র:
উদাহরণ: একজন ব্যক্তি বাড়ি থেকে অফিসে যান ২০ কিমি/ঘণ্টা বেগে এবং অফিস থেকে বাড়ি ফেরেন ৩০ কিমি/ঘণ্টা বেগে। তার গড় গতিবেগ কত?
সমাধান: গড় গতিবেগ = (২ × ২০ × ৩০) / (২০ + ৩০) = ১২০০ / ৫০ = ২৪ কিমি/ঘণ্টা।
Mixture and Alligation (মিশ্রণ)ট্রিক ১: অ্যালিগেশন নিয়ম
ব্যাখ্যা: এই নিয়মটি দুটি ভিন্ন দামের জিনিস মিশিয়ে একটি নির্দিষ্ট দামের মিশ্রণ তৈরি করার ক্ষেত্রে অনুপাত বের করতে ব্যবহৃত হয়।
পদ্ধতি:
(সস্তা দ্রব্যের দাম) (দামী দ্রব্যের দাম)
\ /
(মিশ্রণের গড় দাম)
/ \
(গড় দাম - সস্তা দাম) : (দামী দাম - গড় দাম)
উদাহরণ: প্রতি কেজি ১২ টাকা দামের চালের সাথে প্রতি কেজি ১৮ টাকা দামের চাল কী অনুপাতে মিশিয়ে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দামে বিক্রি করলে কোনো লাভ বা ক্ষতি হবে না?
সমাধান:
১২ ১৮
\ /
১৫
/ \
(১৫ - ১২) : (১৮ - ১৫)
৩ : ৩
১ : ১
সুতরাং, চাল দুটিকে ১:১ অনুপাতে মেশাতে হবে।
ট্রিক ১: শ্রীধর আচার্যের সূত্র
ব্যাখ্যা: ax2 + bx + c = 0 আকারের যেকোনো দ্বিঘাত সমীকরণের বীজ (roots) বের করার জন্য এই সূত্রটি ব্যবহার করা হয়।
সূত্র:
উদাহরণ: x2 - 5x + 6 = 0 সমীকরণের বীজগুলি কী কী?
সমাধান: এখানে a=1, b=-5, c=6।
x = [-(-5) ± √((-5)2 - 4×1×6)] / (2×1)
x = [5 ± √(25 - 24)] / 2
x = [5 ± √1] / 2
x = (5 + 1)/2 অথবা (5 - 1)/2
x = 3 অথবা 2।
ট্রিক ১: মান বসিয়ে সমাধান (Value Putting Method)
ব্যাখ্যা: ত্রিকোণমিতিক অভেদাবলী (identities) প্রমাণ বা সরল করার ক্ষেত্রে θ-এর সুবিধাজনক মান (যেমন ০°, ৩০°, ৪৫°, ৬০°, ৯০°) বসিয়ে অপশন টেস্ট করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো রাশির হর (denominator) শূন্য না হয়ে যায়।
উদাহরণ: যদি sinθ + cosecθ = 2 হয়, তাহলে sin5θ + cosec5θ এর মান কত?
সমাধান: এখানে আমরা বুঝতে পারছি যে θ = ৯০° বসালে sin৯০° = ১ এবং cosec৯০° = ১, যা সমীকরণকে সিদ্ধ করে (১+১=২)।
সুতরাং, sin5(৯০°) + cosec5(৯০°) = (১)৫ + (১)৫ = ১ + ১ = ২।
এই আর্টিকেলে দেওয়া ট্রিকসগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে পরীক্ষার হলে আপনার গতি এবং আত্মবিশ্বাস দুইই বাড়বে। মনে রাখবেন, "Practice makes a man perfect"। তাই শুধু সূত্র মুখস্থ না করে, বিভিন্ন ধরনের অঙ্কে এগুলোর প্রয়োগ করুন। শুভকামনা!
Last Updated: June 10, 2025