
দূরত্ব, সময় ও গতিবেগ: কঠিন অঙ্ক সমাধান করুন ১০ সেকেন্ডে! (All India Govt. Job Special)
বিজ্ঞানবুক-এর সকল পাঠকদের স্বাগত। ভারতের যেকোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় (SSC CGL, CHSL, Rail NTPC, Group D, WBCS, PSC) গণিতের একটি অবশ্যম্ভাবী অধ্যায় হলো দূরত্ব, সময় ও গতিবেগ। পরীক্ষার্থীরা প্রায়ই এই অধ্যায়ের অঙ্ক সমাধানে অনেক বেশি সময় নষ্ট করেন। কিন্তু আজ আমরা এমন কিছু অব্যর্থ শর্ট ট্রিকস শিখব যা ব্যবহার করে আপনি মাত্র ৫-১০ সেকেন্ডের মধ্যেই সঠিক উত্তর বের করতে পারবেন।
ট্রিক ১: কিমি/ঘণ্টা (km/hr) ⇄ মিটার/সেকেন্ড (m/s) রূপান্তর
এটি প্রায় প্রতিটি অঙ্কের প্রথম ধাপ। এর জন্য শুধু দুটি সংখ্যা মনে রাখুন: ৫ এবং ১৮।
- বড় একক (km/hr) থেকে ছোট এককে (m/s) যেতে: ছোট সংখ্যা (৫) উপরে থাকবে। অর্থাৎ দিয়ে গুণ করুন।
- ছোট একক (m/s) থেকে বড় এককে (km/hr) যেতে: বড় সংখ্যা (১৮) উপরে থাকবে। অর্থাৎ দিয়ে গুণ করুন।
উদাহরণ ১: একটি ট্রেনের গতিবেগ 108 কিমি/ঘণ্টা। সেটির গতিবেগ মিটার/সেকেন্ডে কত?
সমাধান (৫ সেকেন্ডে): মি/সে।
উদাহরণ ২: একজন দৌড়বিদের গতিবেগ 15 মি/সে। তার গতিবেগ কিমি/ঘণ্টায় কত?
সমাধান (৫ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
ট্রিক ২: গড় গতিবেগ (Average Speed) যখন দূরত্ব সমান
যদি কোনো ব্যক্তি বা যান দুটি সমান দূরত্ব যথাক্রমে ও গতিবেগে অতিক্রম করে, তাহলে সাধারণ গড় না করে সরাসরি এই ফর্মুলা ব্যবহার করুন।
শর্টকাট ফর্মুলা:
উদাহরণ ১: একজন ব্যক্তি A থেকে B স্থানে 40 কিমি/ঘণ্টা বেগে যান এবং 60 কিমি/ঘণ্টা বেগে ফিরে আসেন। সমগ্র যাত্রাপথে তার গড় গতিবেগ কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ২: একটি গাড়ি তার যাত্রাপথের প্রথম অর্ধেক 50 কিমি/ঘণ্টা বেগে এবং বাকি অর্ধেক 75 কিমি/ঘণ্টা বেগে যায়। গাড়িটির গড় গতিবেগ কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৩: একটি ট্রেন কলকাতা থেকে দিল্লী 80 কিমি/ঘণ্টা বেগে যায় এবং 120 কিমি/ঘণ্টা বেগে ফিরে আসে। ট্রেনটির গড় গতিবেগ কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৪: একটি বাস যাত্রাপথের প্রথম অর্ধেক 25 কিমি/ঘণ্টা বেগে এবং বাকি অর্ধেক 35 কিমি/ঘণ্টা বেগে অতিক্রম করে। বাসটির গড় গতিবেগ কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৫: একজন সাইকেল আরোহী দুটি সমান দূরত্ব যথাক্রমে 10 কিমি/ঘণ্টা এবং 15 কিমি/ঘণ্টা গতিবেগে যান। তার গড় গতিবেগ কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৬: একটি গাড়ি রাঁচি থেকে পাটনা 70 কিমি/ঘণ্টা বেগে যায় এবং পাটনা থেকে রাঁচি 30 কিমি/ঘণ্টা বেগে ফিরে আসে। গাড়িটির গড় গতিবেগ নির্ণয় করুন।
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৭: এক ব্যক্তি দুটি সমান দূরত্বের পথ যথাক্রমে 4 কিমি/ঘণ্টা এবং 6 কিমি/ঘণ্টা বেগে হাঁটেন। সমগ্র পথে তার গড় গতিবেগ কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে): কিমি/ঘণ্টা।
ট্রিক ৩: ট্রেন সংক্রান্ত সমস্যা (Problems on Trains)
নিয়ম ১: ট্রেন যখন কোনো বিন্দু (লোক, পোস্ট, গাছ) অতিক্রম করে, তখন সে নিজের দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে।
নিয়ম ২: ট্রেন যখন কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সেতু অতিক্রম করে, তখন সে (নিজের দৈর্ঘ্য + প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য) অতিক্রম করে।
উদাহরণ ১: 200 মিটার লম্বা একটি ট্রেন 72 কিমি/ঘণ্টা বেগে চললে একটি ইলেকট্রিক পোস্টকে কত সময়ে অতিক্রম করবে?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে):
১. গতিবেগ = মি/সে।
২. সময় = সেকেন্ড।
উদাহরণ ২: 150 মিটার লম্বা একটি ট্রেন 54 কিমি/ঘণ্টা বেগে কত সময়ে 250 মিটার লম্বা একটি প্ল্যাটফর্মকে অতিক্রম করবে?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
১. মোট দূরত্ব = ট্রেনের দৈর্ঘ্য + প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য = মিটার।
২. গতিবেগ = মি/সে।
৩. সময় = সেকেন্ড।
ট্রিক ৪: অনুপাতের অব্যর্থ ব্যবহার (দেরি/আগে পৌঁছানোর অঙ্ক)
সরকারি চাকরির পরীক্ষার গণিতে এটি হলো একটি ব্রহ্মাস্ত্র। এই ট্রিকটি বুঝতে পারলে আপনি বড় বড় অঙ্ক কোনো রকম জটিল সমীকরণ ছাড়াই মুখে মুখে সমাধান করতে পারবেন।
মূল ধারণাটি কী?
ধারণাটি খুব সহজ: যখন দূরত্ব স্থির বা নির্দিষ্ট থাকে, তখন গতিবেগের সাথে সময়ের সম্পর্ক হয় ব্যস্তানুপাতিক (inversely proportional)।
এর মানে হলো:
- যদি আপনি গতিবেগ বাড়ান, তাহলে সময় কম লাগবে।
- যদি আপনি গতিবেগ কমান, তাহলে সময় বেশি লাগবে।
অর্থাৎ, গতিবেগের অনুপাত যা হবে, সময়ের অনুপাত তার ঠিক উল্টো হবে। যদি গতিবেগের অনুপাত হয় , তবে সময়ের অনুপাত হবে ।
চলুন, এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে আমরা কয়েকটি উদাহরণ সমাধান করি।
১০টি সেরা উদাহরণ (SSC, Rail, PSC Special)
উদাহরণ ১: (সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন)
প্রশ্ন: এক ছাত্র তার স্বাভাবিক বেগের অংশ বেগে চললে স্কুলে পৌঁছাতে 10 মিনিট দেরি করে। তার স্কুলে যাওয়ার স্বাভাবিক সময় কত?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে):
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) = (যেহেতু অংশ, তাই স্বাভাবিক বেগ ৫ হলে বর্তমান বেগ ৪)
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) = (ঠিক উল্টো)
- সময়ের অনুপাতের পার্থক্য = ইউনিট।
- এই ১ ইউনিট পার্থক্যের জন্যই দেরি হয় ১০ মিনিট। সুতরাং, ইউনিট = 10 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় হলো ৪ ইউনিট। অতএব, স্বাভাবিক সময় = মিনিট।
উদাহরণ ২: (আগে পৌঁছানোর অঙ্ক)
প্রশ্ন: নিজের স্বাভাবিক বেগের অংশ বেগে চললে এক ব্যক্তি তার গন্তব্যে 4 মিনিট আগে পৌঁছায়। তার স্বাভাবিক সময় কত লাগে?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে):
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য = ইউনিট।
- প্রশ্নানুসারে, ইউনিট = 4 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় ( ইউনিট) = মিনিট।
উদাহরণ ৩: (শতাংশের ব্যবহার - গতিবেগ বৃদ্ধি)
প্রশ্ন: একটি ট্রেন তার স্বাভাবিক গতিবেগ 25% বৃদ্ধি করায় গন্তব্যে পৌঁছাতে 20 মিনিট কম সময় নেয়। ট্রেনটির স্বাভাবিক সময় কত?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
- 25% বৃদ্ধি মানে, আগে গতিবেগ 100 থাকলে এখন হয়েছে 125।
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য = ইউনিট।
- প্রশ্নানুসারে, ইউনিট = 20 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় ( ইউনিট) = মিনিট বা ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
উদাহরণ ৪: (শতাংশের ব্যবহার - গতিবেগ হ্রাস)
প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি তার স্বাভাবিক গতিবেগ 40% হ্রাস করায় অফিসে পৌঁছাতে 30 মিনিট দেরি হয়। তার অফিসে যাওয়ার স্বাভাবিক সময় কত?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
- 40% হ্রাস মানে, আগে গতিবেগ 100 থাকলে এখন হয়েছে 60।
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য = ইউনিট।
- প্রশ্নানুসারে, ইউনিট = 30 মিনিট।
- অতএব, ইউনিট = 15 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় ( ইউনিট) = মিনিট।
উদাহরণ ৫: (বর্তমান সময় নির্ণয়)
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি স্বাভাবিক বেগের অংশ বেগে হেঁটে গেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে 2 ঘণ্টা দেরি হয়। বর্তমানে তার কত সময় লাগছে?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য = ইউনিট।
- প্রশ্নানুসারে, ইউনিট = 2 ঘণ্টা।
- অতএব, ইউনিট = 1 ঘণ্টা।
- বর্তমান সময় ( ইউনিট) = ঘণ্টা।
উদাহরণ ৬: (দূরত্ব নির্ণয় - লেভেল ২)
প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি 30 কিমি/ঘণ্টা বেগে যাত্রা করেন। তিনি তার গতিবেগ অংশ করায় গন্তব্যে পৌঁছাতে 12 মিনিট দেরি হয়। বাড়ি থেকে গন্তব্যের দূরত্ব কত?
সমাধান (২০ সেকেন্ডে):
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য ( ইউনিট) = 12 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় ( ইউনিট) = মিনিট = 1 ঘণ্টা।
- এখন দূরত্ব = স্বাভাবিক গতিবেগ × স্বাভাবিক সময় = কিমি।
উদাহরণ ৭: (দুটি ভিন্ন গতিবেগের সাপেক্ষে)
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি 5 কিমি/ঘণ্টা বেগে হাঁটলে অফিসে পৌঁছাতে 7 মিনিট দেরি হয়। কিন্তু 6 কিমি/ঘণ্টা বেগে হাঁটলে 5 মিনিট আগে পৌঁছান। তার অফিস থেকে বাড়ির দূরত্ব কত?
সমাধান (২৫ সেকেন্ডে):
- গতিবেগের অনুপাত =
- সময়ের অনুপাত =
- মোট সময়ের পার্থক্য = 7 মিনিট দেরি + 5 মিনিট আগে = 12 মিনিট।
- অনুপাতের পার্থক্য ( ইউনিট) = 12 মিনিট।
- প্রথম ক্ষেত্রে সময় ( ইউনিট) = মিনিট = ঘণ্টা।
- দূরত্ব = গতিবেগ × সময় = কিমি।
উদাহরণ ৮: (বড় সংখ্যা দিয়ে)
প্রশ্ন: একটি গাড়ি স্বাভাবিক বেগের অংশ বেগে চলায় 24 মিনিট আগে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে। ওই দূরত্ব অতিক্রম করতে গাড়িটির স্বাভাবিক সময় কত লাগে?
সমাধান (১০ সেকেন্ডে):
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য = ইউনিট।
- প্রশ্নানুসারে, ইউনিট = 24 মিনিট।
- অতএব, ইউনিট = 8 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় ( ইউনিট) = মিনিট।
উদাহরণ ৯: (দশমিক বা ভগ্নাংশের ব্যবহার)
প্রশ্ন: একজন সাইকেল আরোহী তার গতিবেগ 1.5 গুণ বৃদ্ধি করায় স্কুলে পৌঁছাতে 10 মিনিট কম সময় নেয়। তার স্বাভাবিক সময় কত?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
- 1.5 গুণ মানে গুণ।
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য ( ইউনিট) = 10 মিনিট।
- স্বাভাবিক সময় ( ইউনিট) = মিনিট।
উদাহরণ ১০: (অন্যভাবে বলা প্রশ্ন)
প্রশ্ন: যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি ট্রেনের গতিবেগ স্বাভাবিকের থেকে 30% কমে যাওয়ায়, সেটি গন্তব্যে পৌঁছাতে 18 মিনিট বেশি সময় নেয়। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ট্রেনটির বর্তমান সময় কত?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
- 30% কমে যাওয়া মানে, গতিবেগ 100 থেকে 70 হওয়া।
- গতিবেগের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের অনুপাত (স্বাভাবিক : বর্তমান) =
- সময়ের পার্থক্য = ইউনিট।
- প্রশ্নানুসারে, ইউনিট = 18 মিনিট।
- অতএব, ইউনিট = 6 মিনিট।
- বর্তমান সময় ( ইউনিট) = মিনিট বা 1 ঘণ্টা।
এই পদ্ধতিটি বারবার অনুশীলন করলে আপনার গতি এবং নির্ভুলতা দুটোই বাড়বে। মনে রাখবেন, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।
ট্রিক ৫: নৌকা ও স্রোত (Boat & Stream) - সমস্ত অঙ্ক সমাধান করুন ৩০ সেকেন্ডে!
সরকারি চাকরির পরীক্ষায় এমন কোনো প্রশ্নপত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে "নৌকা ও স্রোত" থেকে একটিও অঙ্ক আসেনি। অনেক পরীক্ষার্থী এই অধ্যায়ের অঙ্ক দেখলেই ভয় পেয়ে যান। কিন্তু আজ আমরা এর মূল ধারণাটি এমনভাবে বুঝব এবং এমন কিছু ট্রিকস শিখব যার মাধ্যমে আপনি মাত্র ৩০ সেকেন্ড বা তারও কম সময়ে সঠিক উত্তর বের করতে পারবেন।
প্রথমে মূল ধারণাটি পরিষ্কার করুন
এই অধ্যায়ে মাত্র চারটি জিনিস থাকে। এই চারটি জিনিস বুঝতে পারলেই অর্ধেক কাজ শেষ।
- স্থির জলে নৌকার বেগ (B): যদি জল স্থির থাকত (যেমন পুকুর), তাহলে নৌকা তার নিজের শক্তির দ্বারা যে গতিবেগে চলত। একে আমরা 'B' (Boat) দিয়ে চিহ্নিত করব।
- স্রোতের বেগ (S): নদীর জল যে গতিবেগে বইছে। একে আমরা 'S' (Stream) দিয়ে চিহ্নিত করব।
- স্রোতের অনুকূলে বেগ (D): নৌকা যখন স্রোতের দিকে যায়, তখন স্রোত নৌকাকে সাহায্য করে, ফলে নৌকার গতিবেগ বেড়ে যায়। একে 'Downstream Speed' বা 'D' বলা হয়।
সূত্র: - স্রোতের প্রতিকূলে বেগ (U): নৌকা যখন স্রোতের উল্টো দিকে যায়, তখন স্রোত নৌকাকে বাধা দেয়, ফলে নৌকার গতিবেগ কমে যায়। একে 'Upstream Speed' বা 'U' বলা হয়।
সূত্র:
মাস্টার ট্রিক (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সূত্র)
পরীক্ষায় সাধারণত অনুকূলে বেগ (D) এবং প্রতিকূলে বেগ (U) দেওয়া থাকে এবং নৌকার বেগ (B) বা স্রোতের বেগ (S) জানতে চাওয়া হয়।
১. স্থির জলে নৌকার বেগ (B) বের করার সূত্র:
২. স্রোতের বেগ (S) বের করার সূত্র:
১০টি সেরা উদাহরণ (বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন)
উদাহরণ ১: (সরাসরি সূত্রের প্রয়োগ)
প্রশ্ন: একটি নৌকা স্রোতের অনুকূলে 21 কিমি/ঘণ্টা বেগে এবং স্রোতের প্রতিকূলে 9 কিমি/ঘণ্টা বেগে চলে। স্থির জলে নৌকার বেগ কত?
সমাধান (৫ সেকেন্ডে):
এখানে D = 21, U = 9.
নৌকার বেগ (B) = কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ২: (স্রোতের বেগ নির্ণয়)
প্রশ্ন: উপরের প্রশ্নটি থেকেই স্রোতের বেগ নির্ণয় করুন।
সমাধান (৫ সেকেন্ডে):
স্রোতের বেগ (S) = কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৩: (সময় ও দূরত্ব থেকে বেগ নির্ণয়)
প্রশ্ন: একটি নৌকা স্রোতের অনুকূলে 3 ঘণ্টায় 36 কিমি এবং স্রোতের প্রতিকূলে 5 ঘণ্টায় 40 কিমি যায়। স্থির জলে নৌকার বেগ কত?
সমাধান (২০ সেকেন্ডে):
১. অনুকূলে বেগ (D) = কিমি/ঘণ্টা।
২. প্রতিকূলে বেগ (U) = কিমি/ঘণ্টা।
৩. স্থির জলে নৌকার বেগ (B) = কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৪: (স্থির জলে বেগ দেওয়া থাকলে)
প্রশ্ন: স্থির জলে একটি নৌকার বেগ 10 কিমি/ঘণ্টা এবং স্রোতের বেগ 4 কিমি/ঘণ্টা। নৌকাটি স্রোতের অনুকূলে 70 কিমি যেতে কত সময় নেবে?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
১. অনুকূলে বেগ (D) = B + S = কিমি/ঘণ্টা।
২. প্রয়োজনীয় সময় = ঘণ্টা।
উদাহরণ ৫: (প্রতিকূলে সময় নির্ণয়)
প্রশ্ন: স্থির জলে এক ব্যক্তির সাঁতারের গতিবেগ 8 কিমি/ঘণ্টা। যদি স্রোতের বেগ 2 কিমি/ঘণ্টা হয়, তবে স্রোতের প্রতিকূলে 24 কিমি যেতে তার কত সময় লাগবে?
সমাধান (১৫ সেকেন্ডে):
১. প্রতিকূলে বেগ (U) = B - S = কিমি/ঘণ্টা।
২. প্রয়োজনীয় সময় = ঘণ্টা।
উদাহরণ ৬: (মোট যাত্রার সময়)
প্রশ্ন: একটি নৌকা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব স্রোতের অনুকূলে 4 ঘণ্টায় এবং প্রতিকূলে 6 ঘণ্টায় অতিক্রম করে। যদি স্রোতের বেগ 2 কিমি/ঘণ্টা হয়, তবে স্থির জলে নৌকার বেগ কত?
সমাধান (৩০ সেকেন্ডে):
দূরত্ব স্থির, তাই গতিবেগের অনুপাত সময়ের অনুপাতের বিপরীত।
সময়ের অনুপাত (অনুকূল : প্রতিকূল) =
গতিবেগের অনুপাত (D : U) =
আমরা জানি, B = এবং S =
সুতরাং,
অর্থাৎ, B : S = 5 : 1.
এখানে স্রোতের বেগ (S) হলো 1 ইউনিট, যার মান 2 কিমি/ঘণ্টা।
অতএব, নৌকার বেগ (B) হলো 5 ইউনিট = কিমি/ঘণ্টা।
উদাহরণ ৭: (দূরত্ব নির্ণয়)
প্রশ্ন: স্থির জলে নৌকার বেগ 6 কিমি/ঘণ্টা এবং স্রোতের বেগ 2 কিমি/ঘণ্টা। একটি স্থানে গিয়ে আবার ফিরে আসতে নৌকাটির মোট 6 ঘণ্টা সময় লাগলে, স্থানটির দূরত্ব কত?
সমাধান (৩০ সেকেন্ডে):
১. অনুকূলে বেগ (D) = 6 + 2 = 8 কিমি/ঘণ্টা।
২. প্রতিকূলে বেগ (U) = 6 - 2 = 4 কিমি/ঘণ্টা।
গড় গতিবেগের সূত্র () এখানে ব্যবহার করা যাবে না কারণ যাওয়া-আসার মোট সময় দেওয়া আছে।
ধরুন দূরত্ব d কিমি।
তাহলে,
বা,
বা,
বা, কিমি।
উদাহরণ ৮: (সময়ের তুলনা)
প্রশ্ন: একটি নৌকা স্রোতের প্রতিকূলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব যেতে যে সময় নেয়, স্রোতের অনুকূলে তার অর্ধেক সময়ে সেই দূরত্ব অতিক্রম করে। স্থির জলে নৌকার বেগ এবং স্রোতের বেগের অনুপাত কত?
সমাধান (২০ সেকেন্ডে):
ধরা যাক, অনুকূলে সময় লাগে 1 ঘণ্টা, তাহলে প্রতিকূলে সময় লাগে 2 ঘণ্টা।
সময়ের অনুপাত (অনুকূল : প্রতিকূল) =
গতিবেগের অনুপাত (D : U) =
আমরা জানি,
অনুপাত = ।
উদাহরণ ৯: (একই সময়ে ভিন্ন দূরত্ব)
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে স্রোতের অনুকূলে যে দূরত্ব যান, স্রোতের প্রতিকূলে তার তিন-চতুর্থাংশ দূরত্ব যান। তার নিজের গতিবেগ ও স্রোতের গতিবেগের অনুপাত কত?
সমাধান (৩০ সেকেন্ডে):
যেহেতু সময় স্থির, তাই গতিবেগের অনুপাত দূরত্বের অনুপাতের সমান।
দূরত্বের অনুপাত (অনুকূল : প্রতিকূল) =
সুতরাং, গতিবেগের অনুপাত (D : U) =
ব্যক্তির গতিবেগ (B) : স্রোতের গতিবেগ (S) =
= ।
উদাহরণ ১০: (লেভেল ২ প্রশ্ন)
প্রশ্ন: একটি নৌকা স্রোতের অনুকূলে P থেকে Q তে গিয়ে আবার স্রোতের প্রতিকূলে P তে ফিরে আসতে মোট 5 ঘণ্টা সময় নেয়। যদি স্থির জলে নৌকার বেগ 8 কিমি/ঘণ্টা এবং স্রোতের বেগ 4 কিমি/ঘণ্টা হয়, তবে P ও Q এর মধ্যে দূরত্ব কত?
সমাধান (৩০ সেকেন্ডে):
১. অনুকূলে বেগ (D) = 8 + 4 = 12 কিমি/ঘণ্টা।
২. প্রতিকূলে বেগ (U) = 8 - 4 = 4 কিমি/ঘণ্টা।
ধরা যাক, দূরত্ব d কিমি।
প্রশ্নানুসারে,
বা,
বা,
বা, কিমি।
আশা করি, এই উদাহরণগুলি সমাধান করার পর "নৌকা ও স্রোত" নিয়ে আপনার মনে আর কোনো ভয় থাকবে না। সাফল্যের জন্য প্রয়োজন শুধু নিয়মিত অনুশীলন। বিজ্ঞানবুক-এর সাথে থাকুন, শিখতে থাকুন!
এই ট্রিকগুলি নিয়মিত অনুশীলন করুন, তাহলে পরীক্ষার হলে আপনি অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকবেন। গণিত কোনো ভয়ের বিষয় নয়, এটি শুধুমাত্র সঠিক পদ্ধতি ও অনুশীলনের খেলা। বিজ্ঞানবুক-এর সাথে থেকে নিজের প্রস্তুতিকে আরও মজবুত করুন। আপনাদের সকলের সাফল্য কামনা করি!