মাধ্যমিক অঙ্কের সমস্ত সূত্র
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী Madhyamik প্রস্তুতির জন্য সমস্ত সূত্র ও ব্যাখা।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় অঙ্কে ভালো ফল করার জন্য সূত্রগুলো ঠোঁটস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষার হলে অনেক সময় সঠিক সূত্র মনে না পড়ার কারণে জানা অঙ্কও ভুল হয়ে যায়। তাই, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সিলেবাসের প্রতিটি অধ্যায় (পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি ও রাশিবিজ্ঞান) থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এই নোটটি পরীক্ষার আগে রিভিশনের জন্য একটি অপরিহার্য গাইড।
পাটিগণিতের প্রধান তিনটি অংশ হলো সরল সুদ, চক্রবৃদ্ধি সুদ ও সমহার বৃদ্ধি/হ্রাস এবং অংশীদারি কারবার।
যখন সুদ শুধুমাত্র আসলের উপর হিসাব করা হয়, তখন তাকে সরল সুদ বলে।
- $I$ = মোট সুদ (Total Interest)
- $P$ = আসল বা মূলধন (Principal)
- $T$ = সময় (বছরে) (Time in years)
- $R$ = বার্ষিক সুদের হার (Rate of Interest)
সবৃদ্ধিমূল বা সুদ-আসল ($A$) নির্ণয়ের সূত্র:
প্রথম বছরের সুদ আসলের সাথে যুক্ত হয়ে দ্বিতীয় বছরের আসল তৈরি করলে, তাকে চক্রবৃদ্ধি সুদ বলে।
১. সমূল চক্রবৃদ্ধি নির্ণয়:
এখানে $n$ হলো বছরের সংখ্যা। যদি সুদ অর্ধবার্ষিক (৬ মাস অন্তর) দেওয়া হয়, তবে সুদের হার $R/2$ এবং সময় $2n$ হবে।
২. সমহার বৃদ্ধি বা হ্রাস:
কোনো শহরের জনসংখ্যা বা মেশিনের মূল্য প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বাড়লে বা কমলে এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।
ব্যবসায় লভ্যাংশ বন্টন সাধারণত মূলধনের অনুপাতে হয়। তবে সময় আলাদা হলে মিশ্র অংশীদারি কারবারের নিয়ম প্রযোজ্য হয়।
-
সময় পরিবর্তন: সুদের অঙ্কে সময় সর্বদা 'বছরে' নিতে হবে।
• মাস থাকলে:প্রদত্ত মাস ১২বছর।
• দিন থাকলে:প্রদত্ত দিন ৩৬৫বছর। - অংশীদারি কারবার: যদি অংশীদারদের সময় (Time) উল্লেখ না থাকে বা সবার সময় সমান হয়, তবে মূলধনের অনুপাতই লাভের অনুপাত হবে।
সাধারণ রূপ: $ax^2 + bx + c = 0$, যেখানে $a, b, c$ বাস্তব সংখ্যা এবং $a \neq 0$।
শ্রীধর আচার্যের সূত্র: সমীকরণের বীজ দুটি নির্ণয় করতে:
বীজের প্রকৃতি (Nature of Roots):
এখানে $b^2 - 4ac$ কে নিরূপক (Discriminant) বলা হয়।
- যদি $b^2 - 4ac > 0$ হয়, তবে বীজদ্বয় বাস্তব ও অসমান।
- যদি $b^2 - 4ac = 0$ হয়, তবে বীজদ্বয় বাস্তব ও সমান ($-\frac{b}{2a}$)।
- যদি $b^2 - 4ac < 0$ হয়, তবে কোনো বাস্তব বীজ পাওয়া যাবে না।
বীজ ও সহগের সম্পর্ক: যদি বীজ দুটি $\alpha$ এবং $\beta$ হয়:
দুটি চলরাশি $x$ ও $y$ এর মধ্যে সম্পর্ক:
- সরল ভেদ: $x \propto y \Rightarrow x = k \cdot y$ (যেখানে $k$ অশূন্য ভেদ ধ্রুবক)।
- ব্যস্ত ভেদ: $x \propto \frac{1}{y} \Rightarrow xy = k$।
যদি $a, b, c, d$ সমানুপাতী হয়, তবে $a:b :: c:d$ বা $\frac{a}{b} = \frac{c}{d}$।
ক্রমিক সমানুপাতী: তিনটি রাশি $a, b, c$ ক্রমিক সমানুপাতী হলে $b^2 = ac$ হয়। এখানে $b$ কে মধ্যসমানুপাতী বলা হয়।
যদি $\frac{a}{b} = \frac{c}{d}$ হয়, তবে:
$\frac{a+b}{a-b} = \frac{c+d}{c-d}$
জ্যামিতিতে উপপাদ্য মুখস্ত করার চেয়ে প্রয়োগ বোঝা বেশি জরুরি। অঙ্ক করার জন্য নিচের সিদ্ধান্তগুলো মনে রাখতে হবে।
- ব্যাস ও জ্যা: বৃত্তের কেন্দ্র থেকে ব্যাস নয় এমন কোনো জ্যা-এর উপর লম্ব অঙ্কন করলে, ওই লম্ব জ্যা-টিকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
- কোণ সম্পর্ক: একই বৃত্তচাপের দ্বারা গঠিত কেন্দ্রস্থ কোণ, বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ। অর্থাৎ, কেন্দ্রস্থ কোণ = 2 $\times $বৃত্তস্থ কোণ।
- অর্ধবৃত্তস্থ কোণ: অর্ধবৃত্তস্থ কোণ সর্বদা সমকোণ ($90^\circ$)।
- বৃত্তস্থ চতুর্ভুজ: বৃত্তস্থ চতুর্ভুজের বিপরীত কোণগুলি পরস্পর সম্পূরক (যোগফল $180^\circ$)।
অর্থাৎ, স্পর্শক ও ব্যাসার্ধের মধ্যবর্তী কোণ $90^\circ$। এছাড়া, বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে যে দুটি স্পর্শক অঙ্কন করা যায়, তাদের দৈর্ঘ্য সমান হয়।
যেকোনো সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে:
দুটি ত্রিভুজ সদৃশ হলে তাদের অনুরূপ বাহুগুলির অনুপাত সমান হয়।
যদি $\triangle ABC \sim \triangle PQR$ হয়, তবে:
- উপপাদ্য লেখার সময় 'প্রদত্ত', 'প্রামাণ্য', 'অঙ্কন' (যদি থাকে) এবং 'প্রমাণ'—এই পয়েন্টগুলো স্পষ্টভাবে লিখবে।
- সম্পাদ্য (Construction) পেন্সিল দিয়ে পরিষ্কার করে আঁকবে। কম্পাসের দাগ যেন বোঝা যায়, মুছবে না।
সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর অনুপাত:
$1 + \tan^2\theta = \sec^2\theta$
$1 + \cot^2\theta = \text{cosec}^2\theta$
$\tan(90^\circ - \theta) = \cot\theta$
$\sec(90^\circ - \theta) = \text{cosec}\theta$
এই অধ্যায়ে মূলত $\tan\theta$ এর ব্যবহার বেশি হয়।
• উন্নতি কোণ: যখন নিচ থেকে উপরে কোনো বস্তুকে দেখা হয়।
• অবনতি কোণ: যখন উপর থেকে নিচে কোনো বস্তুকে দেখা হয়।
এই ছকটি মনে রাখা বাধ্যতামূলক:
| Ratio | $0^\circ$ | $30^\circ$ | $45^\circ$ | $60^\circ$ | $90^\circ$ |
|---|---|---|---|---|---|
| $\sin$ | 0 | $1/2$ | $1/\sqrt{2}$ | $\sqrt{3}/2$ | 1 |
| $\cos$ | 1 | $\sqrt{3}/2$ | $1/\sqrt{2}$ | $1/2$ | 0 |
| $\tan$ | 0 | $1/\sqrt{3}$ | 1 | $\sqrt{3}$ | অসংজ্ঞাত |
পরিমিতির অঙ্কে একক (Unit) লেখা বাধ্যতামূলক। আয়তনের ক্ষেত্রে 'ঘন একক' এবং ক্ষেত্রফলের ক্ষেত্রে 'বর্গ একক' লিখতে ভুলবে না।
আয়তঘন: (দৈর্ঘ্য $l$, প্রস্থ $b$, উচ্চতা $h$)
- সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল $= 2(lb + bh + lh)$
- আয়তন $= l \times b \times h$
- কর্ণের দৈর্ঘ্য $= \sqrt{l^2 + b^2 + h^2}$
ঘনক: (প্রতিটি বাহু $a$)
- সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল $= 6a^2$
- আয়তন $= a^3$
- কর্ণ $= a\sqrt{3}$
ব্যাসার্ধ $r$ এবং উচ্চতা $h$ হলে:
বক্রতলের ক্ষেত্রফল $= 2\pi r h$
সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল $= 2\pi r (h + r)$
বক্রতলের ক্ষেত্রফল $= 4\pi r^2$
সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল $= 3\pi r^2$ এবং আয়তন $= \frac{2}{3}\pi r^3$।
ব্যাসার্ধ $r$, উচ্চতা $h$ এবং তির্যক উচ্চতা $l$। সম্পর্ক: $l^2 = h^2 + r^2$।
বক্রতলের ক্ষেত্রফল $= \pi r l$
সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল $= \pi r (l + r)$
- একক পরিবর্তন: অঙ্কের সব রাশি একই এককে (Unit) আছে কিনা দেখে নেবে। (যেমন: মিটার ও ডেসিমিটার থাকলে সবগুলোকে ডেসিমিটারে নিয়ে যাওয়া ভালো)।
- গলানো বা রূপান্তর: একটি ঘনবস্তু গলিয়ে অন্য আকার দিলে (যেমন: গোলক গলিয়ে চোঙ), দুটির আয়তন সর্বদা সমান থাকবে।
-
রং করা বা বেড়া দেওয়া:
• চারপাশ বা দেওয়াল রং করতে বললে $\rightarrow$ পার্শ্বতলের ক্ষেত্রফল।
• জমি চাষ বা নিরেট বস্তু তৈরি করতে বললে $\rightarrow$ আয়তন।
মাধ্যমিকের শেষ বড় প্রশ্নটি এখান থেকে আসে। সূত্রগুলো বড় হলেও অঙ্কগুলো তুলনামূলক সহজ।
প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct Method):
কল্পিত গড় পদ্ধতি (Assumed Mean Method):
যেখানে $a$ = কল্পিত গড় এবং $d_i = x_i - a$।
প্রথমে ক্রমযৌগিক পরিসংখ্যা (Cumulative Frequency) বের করতে হবে। তারপর $n/2$ এর মান দেখে মধ্যমা শ্রেণি নির্ণয় করতে হবে।
- $l$ = মধ্যমা শ্রেণির নিম্নসীমা
- $n$ = মোট পরিসংখ্যা
- $cf$ = মধ্যমা শ্রেণির ঠিক আগের শ্রেণির ক্রমযৌগিক পরিসংখ্যা
- $f$ = মধ্যমা শ্রেণির পরিসংখ্যা
- $h$ = শ্রেণি দৈর্ঘ্য
যে শ্রেণির পরিসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেটিই সংখ্যাগুরু শ্রেণি।
- $l$ = সংখ্যাগুরু শ্রেণির নিম্নসীমা
- $f_1$ = সংখ্যাগুরু শ্রেণির পরিসংখ্যা
- $f_0$ = সংখ্যাগুরু শ্রেণির ঠিক আগের শ্রেণির পরিসংখ্যা
- $f_2$ = সংখ্যাগুরু শ্রেণির ঠিক পরের শ্রেণির পরিসংখ্যা
অনেক সময় ছোট প্রশ্নে এই সূত্রটি আসে:
ওজাইভ গ্রাফটি মূলত মধ্যমা (Median) নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি 'ক্ষুদ্রতর সূচক' এবং 'বৃহত্তর সূচক'—এই দুই প্রকারের হয়।
মাধ্যমিক গণিত পরীক্ষায় ৯০ নম্বরের জন্য ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সময় থাকে। সঠিক পরিকল্পনাই পারে তোমাকে পুরো উত্তর করতে সাহায্য করতে।
| বিভাগ | বিষয়বস্তু | বরাদ্দ সময় |
|---|---|---|
| ১ - ৩ | MCQ, সত্য/মিথ্যা, শূন্যস্থান (৩৬ নম্বর) | ৪০ মিনিট |
| ৪ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (২০ নম্বর) | ৪০ মিনিট |
| ৫ - ১৫ | বড় অঙ্ক (পাটি, বীজ, জ্যামিতি ইত্যাদি) | ৮০ মিনিট |
| -- | রিভিশন ও খাতা সাজানো | ২০ মিনিট |
- ❌ প্রশ্ন না পড়া: অনেক সময় প্রশ্নে 'ব্যাস' দেওয়া থাকে কিন্তু সূত্রে 'ব্যাসার্ধ' বসাতে হয়। প্রশ্নটি দুবার পড়ো।
- ❌ একক না লেখা: উত্তরের শেষে টাকা, বছর, সেমি, বর্গ একক ইত্যাদি না লিখলে ১ নম্বর কাটা যেতে পারে।
- ❌ রাফ কাজ (Rough Work): খাতার ডানদিকে মার্জিন টেনে রাফ করবে। রাফ কখনো অন্য পেজে করবে না।
- ✅ সম্পাদ্য ও উপপাদ্য: জ্যামিতির চিত্র আঁকার সময় পেন্সিল শার্প করে নেবে। অপরিচ্ছন্ন ছবির জন্য নম্বর কাটা যায়।
প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এই সূত্রগুলো প্রতিদিন একবার করে লিখে অভ্যাস করো। পরীক্ষার খাতায় পরিমিতি ও উপপাদ্যের চিত্র পেন্সিল দিয়ে আঁকবে এবং একক ঠিকমতো লিখবে। তোমাদের সবার পরীক্ষা ভালো হোক!
