বিভিন্ন পর্বের বৈশিষ্ট্য (মেটাজোয়া উপরাজ্যের অন্তর্গত পর্ব)

নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো অ্যানিম্যালিয়া রাজ্যের অর্থাৎ প্রাণী জগতের উপরাজ্য মেটাজোয়ার বিভিন্ন পর্বের বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি পর্বের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে থাকবে সেই পর্বের কিছু প্রাণীর উদাহরণ। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

www.bigyanbook.co.in


প্রাণীজগৎ (রাজ্য - অ্যানিম্যালিয়া) দুটি উপরাজ্যে বিভক্ত। এই দুটি উপ রাজ্য হল প্রোটোজোয়া এবং মেটাজোয়া। প্রোটোজোয়া রাজ্যে সাতটি পর্ব আছে। মেটাজোয়া রাজ্যে ১১ টি পর্ব রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা মেটাজোয়া উপ রাজ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পর্ব সম্পর্কে আলোচনা করবো। মেটাজোয়া উপ রাজ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পর্বে রয়েছে বহু কোষী এবং ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির প্রাণী।


এখন আমরা পরপর মেটাজোয়া উপরাজ্যের অন্তর্গত সবকটি পর্বের বৈশিষ্ট্য এবং উদাহরণ দেখবো।

পর্ব - পরিফেরা

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র বা অসটিয়া থাকে, দেহের মধ্যে ক্যানাল তন্ত্র, দেহের মুক্তপ্রান্তে একটি বড় ছিদ্র বা অসকিউলাম থাকে।

2. এই পর্বের প্রাণীদের দেহের অভ্যন্তরে সাহা জেলা যুক্ত কোয়ানোসাইট কোষ দেখা যায়।

3. এদের দেহের কঙ্কাল কাঠামো গঠিত হয় স্পিকিউল বা স্পঞ্জিন তন্তু দ্বারা।

4. এই পর্বের প্রাণীদের দেহের মধ্যে জল অস্টিয়ার দ্বারা প্রবেশ করে ক্যানাল তন্ত্র দ্বারা বাহিত হয়ে অসকিউলাম দিয়ে বেরিয়ে যায়।

উদাহরণ : Scypha gelatinosum , Spongilla locustris প্রভৃতি।


পর্ব - নিডেরিয়া

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ দ্বিকোশস্তরীয় বা ডিপ্লোব্লাস্টিক হয়, এক্টোডার্ম এবং এন্ডোডার্মের মাঝখানে কোষ বিহীন মেসোগ্লিয়া স্তর থাকে।

2. দেহের মধ্যে একটি মাত্র দেহ গহ্বর বা গ্যাসট্রোভাসকুলার গাহবদ থাকে যা একটি মাত্র ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত।

3. এই পর্বের প্রাণীদের মুখ ছিদ্রকে ঘিরে অসংখ্য কর্ষিকা থাকে যার মধ্যে নিডোব্লাস্ট কোষ বিদ্যমান।

4. এদের যৌন ও অযৌন জনন হয়। এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের জীবন চক্রে সিলিয়া যুক্ত প্লানুলা লার্ভা দেখা যায়।

উদাহরণ : Hydra vulgaris , Aurelia aurita প্রভৃতি।


পর্ব - টিনোফোরা

1. এই পর্বের প্রাণীদের দেহ ত্রিকোশস্তরীয় বা ট্রিপ্লোব্লাস্টিক, দ্বিঅরীয়ভাবে প্রতিসম হয়।

2. এটা সিলিয়ার সাহায্যে চলন এবং সিলিয়াগুলি যুক্ত হয়ে চিরুনি প্লেট তৈরি করে।

3. এই পর্বের প্রাণীদের দেহত্বকে ল্যাসোকোষ বা কলোব্লাস্ট কোষ থাকে।

4. কিছু ক্ষেত্রে সাইডিপপিড লার্ভা দশা থাকে।

উদাহরণ : Hormiphora plumosa , Beroe forskalii প্রভৃতি।


পর্ব - প্লাটিহেলমিনথিস

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ চ্যাপ্টা, সিলোম বিহীন, ত্রিকোশস্তর বিশিষ্ট হয়।

2. এই পর্বের প্রাণীদের রেচন কাজ প্রধানত ফ্লেম কোষ দ্বারা সম্পন্ন হয়।

3. স্নায়ুতন্ত্র আদিম প্রকৃতির।

4. পৌষ্টিক নালী অসম্পূর্ণ অথবা শাখা যুক্ত হয়।

উদাহরণ : Fasciola hepatica , Taenia solium প্রভৃতি।


পর্ব - অ্যাস্কহেলমিনথিস

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ অখন্ডিত নলাকার, দ্বিপার্শ্ব প্রতিসম এবং ত্রিকোশস্তর বিশিষ্ট হয়।

2. এদের দেহ কিউটিকল দ্বারা আবৃত থাকে।

3. এই পর্বের প্রাণীদের সিলোম অপ্রকৃত অর্থাৎ এই পর্বের প্রাণীরা ছদ্মসিলোম যুক্ত হয়।

4. এদের পৌষ্টিক নালীর সম্পূর্ণ এবং নলাকার।

উদাহরণ : Ascaris lumbricoides , Wuchereria bancrofti প্রভৃতি।


পর্ব - অ্যানিলিডা

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ মেটামেরিক খণ্ডক যুক্ত অর্থাৎ বাইরের খণ্ড গুলি ভিতরেও সেপ্টাম দ্বারা পৃথককৃত।

2. দেহ ত্রিকোশস্তর বিশিষ্ট, দেহের বাইরের আবরণ নরম ও কাইটিন বিহীন হয়।

3. এই পর্বের প্রাণীদের চলন অঙ্গ হলো সিটি এবং প্যারাপোডিয়া।

4. এই পর্বের প্রাণীদের রক্ত সংবহন তন্ত্র বদ্ধ প্রকৃতির।

উদাহরণ : Hirudinaria granulosa , Pheretima posthuma প্রভৃতি।


পর্ব - আর্থ্রোপোডা

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ সাধারণত মস্তক, বক্ষ এবং উদরে বিভক্ত।

2. দেহ খন্ডে সন্ধিল উপাঙ্গ অবস্থিত।

3. এই পর্বের প্রাণীদের বহিঃ কঙ্কাল কাইটিন দ্বারা নির্মিত।

4. এদের রক্ত সংবহন তন্ত্র মুক্ত প্রকৃতির হয়।

উদাহরণ : Periplaneta americana , Penaeus monodon প্রভৃতি।


পর্ব - মোলাস্কা

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ নরম অখন্ডিত, সাধারণ খোলক দ্বারা আবৃত।

2. ম্যান্টল নামক পর্দা দিয়ে দেহের অন্তর যন্ত্র গুলি পরিবৃত থাকে।

3. এদের মাংসল পদ থাকে।

4. এই পর্বের প্রাণীদের শ্বসন অঙ্গ টিনিডিয়া, পালমোনারি স্যাক, রেচন অঙ্গ একজোড়া মেটা নেফ্রিডিয়া।

উদাহরণ : Pila globasa , Octopus vulgaris প্রভৃতি।


পর্ব - ইকাইনোডার্মাটা

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ পঞ্চ অরীয়ভাবে প্রতিসম।

2. এই পর্বের প্রাণীদের বহিস্তক কন্টকময় হয় এবং অসিকল নামক অন্ত কঙ্কাল থাকে।

3. অসংখ্য নালীপথ চলনে, খাদ্য গ্রহণে, শ্বসনে অংশ নেয়।

উদাহরণ : Cucumaria frondosa , Echinus esculentus প্রভৃতি।


পর্ব - হেমিকর্ডাটা

1. এই পর্বের অন্তর্গত প্রাণীদের দেহ প্রবোসিস, কলার ও ট্রাঙ্ক এই তিন অংশে বিভেদিত।

2. স্টোমোকর্ড ছোটো এবং দেহের অগ্ৰভাগে প্রোবোসিসে থাকে।

3. গলবিলের পার্শ্বে ফুলকা ছিদ্র থাকে।

4. দেহের বহিস্তকে নার্ভকলা থাকে।

উদাহরণ : Balanoglossus gigas , Saccoglossus kowalevskii প্রভৃতি।


পর্ব - কর্ডাটা

1. সারা জীবন অথবা জীবন চক্রের কোনো না কোনো দশায় নোটোকর্ড থাকে।

2. নোটোকর্ডের উপরিভাগে পৃষ্ঠীয় ফাঁপা নার্ভ কর্ড বর্তমান।

3. সারা জীবন অথবা জীবন চক্রের কোনো না কোনো দশায় গলবিলীয় ফুলকা ছিদ্র থাকে।

4. অঙ্কীয় হৃৎপিণ্ড বর্তমান।

উদাহরণ : Ascidia sp. , Branchiostoma sp. প্রভৃতি নিম্ন কর্ডাটা। হাঙর, রুই মাছ, ব্যাঙ, গিরগিটি, পায়রা, মানুষ প্রভৃতি উচ্চ কর্ডাটা।


কেমন লাগছে জানান কমেন্ট করে। শেয়ার করুন এই পেজটি। যুক্ত হন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের সাথে। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল। ফলো করুন আমাদেরকে ফেসবুকে। পড়ুন অন্যান্য লেখাগুলিও। পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক। ধন্যবাদ।

Bigyanbook

Share your feedback! Share this post! Explore all posts. Thanks for reading. facebook youtube whatsapp email

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন