প্রাচীন ভারতের গল্প | Ancient India story

নমস্কার বন্ধুরা! সরকারি চাকরির প্রস্তুতির মহাসমুদ্রে ইতিহাস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ। বিশেষ করে রেলওয়ে (RRB) এবং স্টাফ সিলেকশন কমিশন (SSC)-এর মতো পরীক্ষায় প্রাচীন ভারতের ইতিহাস থেকে প্রতি বছরই এমন কিছু প্রশ্ন আসে, যা আপনার র‍্যাঙ্ক নির্ধারণ করে দিতে পারে। কিন্তু শুধু সাল, তারিখ বা রাজার নাম মুখস্থ করতে গেলে বিষয়টা ভীষণ একঘেয়ে ও কঠিন মনে হয়।

প্রাচীন ভারতের গল্প | Ancient India story

তাই আজ আমরা একটা টাইম মেশিনে চড়ে বসব। আমরা পাড়ি দেব হাজার হাজার বছর আগের ভারতবর্ষে, যেখানে সভ্যতা সবে ডানা মেলছে। গল্পের ছলে আমরা পুরো সময়কালটা ঘুরে দেখব আর তার সাথে পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার (One-Liners) গুলো এমনভাবে গুছিয়ে নেব, যাতে আর কিছুই বাদ না যায়। চলুন, শুরু করা যাক এই রোমাঞ্চকর যাত্রা!


১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ (Prehistoric Age): যখন পাথরের ভাষায় কথা হতো

এটা সেই সময়, যখন মানুষ লিখতে বা পড়তে জানত না। তাদের জীবনযাত্রার সমস্ত কথা লুকিয়ে আছে তাদের ফেলে যাওয়া পাথরের হাতিয়ার, গুহার দেওয়ালে আঁকা ছবি আর মাটির নিচের কঙ্কালে। এই যুগকে মূলত তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়।

ক) প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Palaeolithic Age)

কল্পনা করুন, আদিম মানুষ জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বড় বড় অমসৃণ পাথর দিয়ে পশু শিকার করছে আর রাতের বেলা হিংস্র জন্তুর থেকে বাঁচতে গুহায় আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের জীবন ছিল সম্পূর্ণ যাযাবর ও প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • আবিষ্কার: এই যুগের মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ছিল আগুন
  • হাতিয়ার: কোয়ার্টজাইট পাথরের তৈরি বড়, ভোঁতা এবং অমসৃণ হাতিয়ার (যেমন: হাতকুঠার, চপার) ব্যবহৃত হত।
  • জীবনযাত্রা: মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক (Food Gatherer) ও শিকারী। কোনো স্থায়ী বাসস্থান ছিল না।
  • গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র: মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা (প্রাচীন গুহাচিত্রের জন্য বিখ্যাত), পাকিস্তানের সোয়ান উপত্যকা, তামিলনাড়ুর আত্তিরামপাক্কাম।

খ) মধ্য প্রস্তর যুগ (Mesolithic Age)

এই সময়ে আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ হতে শুরু করে। মানুষ এবার আরও বুদ্ধিমান। তারা আগের চেয়ে ছোট, হালকা ও ধারালো পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে, যেগুলোকে বলা হয় "মাইক্রোলিথ" (Microlith)। পশুপালন করার ভাবনাও প্রথম এই যুগেই আসে।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • হাতিয়ার: ক্ষুদ্র পাথরের অস্ত্র বা মাইক্রোলিথ-এর ব্যবহার এই যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  • জীবনযাত্রা: পশুপালনের সূচনা এবং মাছ ধরা শুরু হয়।
  • গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র: রাজস্থানের বাগোর, মধ্যপ্রদেশের আদমগড় (এখানে পশুপালনের প্রাচীনতম নিদর্শন মিলেছে)।

গ) নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age): সভ্যতার প্রথম বিপ্লব

এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম বড় বিপ্লব। মানুষ আর খাবারের জন্য শুধু ঘুরে বেড়ায় না, তারা নিজেরাই খাদ্য উৎপাদন করতে শিখেছে, অর্থাৎ কৃষিকাজ! ফলে যাযাবর জীবনে ইতি। গ্রাম তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু হলো। আর এই যুগেই ঘটল আরও এক যুগান্তকারী আবিষ্কার - চাকা

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • প্রধান বৈশিষ্ট্য: কৃষিকাজের সূচনা এবং স্থায়ী বসতি স্থাপন।
  • আবিষ্কার: চাকার আবিষ্কার এই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি, যা মৃৎশিল্প ও পরিবহণে বিপ্লব আনে।
  • গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র: পাকিস্তানের মেহেরগড় (প্রাচীনতম কৃষিকাজ ও সভ্যতার নিদর্শন), কাশ্মীরের বুর্জাহোম (গর্ত-বাস বা Pit-dwelling এবং মানুষের সঙ্গে কুকুরের সমাধির নিদর্শন), বিহারের চিরান্দ

২. সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা (Indus Valley Civilization): এক বিস্মৃত নগর

ভাবুন তো, আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে আমাদের দেশে এমন এক সভ্যতা ছিল যার নগর পরিকল্পনা (Town Planning) আজকের উন্নত শহরগুলোকেও হার মানায়! পোড়া ইঁটের বাড়ি, ৯০ ডিগ্রিতে ছেদ করা রাস্তা, ভূগর্ভস্থ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা (Underground Drainage System) – সবকিছুই ছিল সেই সভ্যতায়। এটাই হলো সিন্ধু সভ্যতা, যার প্রথম কেন্দ্র হরপ্পা-তে আবিষ্কৃত হওয়ায় একে হরপ্পা সভ্যতাও বলা হয়।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • সময়কাল: আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (কার্বন-১৪ ডেটিং অনুযায়ী)।
  • আবিষ্কারক: দয়ারাম সাহানি ১৯২১ সালে হরপ্পা (রাভী বা পরুষ্ণী নদীর তীরে) আবিষ্কার করেন। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২২ সালে মহেঞ্জোদারো (সিন্ধু নদের তীরে) আবিষ্কার করেন।
  • প্রধান বৈশিষ্ট্য: এটি ছিল একটি নগরকেন্দ্রিক (Urban) এবং ব্রোঞ্জ যুগের (Bronze Age) সভ্যতা। এঁরা লোহার ব্যবহার জানত না
  • লিপি: এঁদের লিপি ছিল চিত্রলিপি (Pictographic) বা ভাবচিত্রলিপি, যা আজও পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
  • উপাসনা: এঁরা পশুপতি শিব (আদি-শিব) এবং মাতৃদেবী (Mother Goddess)-র পূজা করত।
  • পতনের কারণ: পতনের সঠিক কারণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আর্য আক্রমণ, বিধ্বংসী বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমিকম্পকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয়।
  • গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও তাদের নিদর্শন:
    • মহেঞ্জোদারো: অর্থ 'মৃতের স্তূপ'। এখান থেকে বিখ্যাত বৃহৎ স্নানাগার (Great Bath), বৃহৎ শস্যাগার (Great Granary) এবং ব্রোঞ্জের নৃত্যরতা নারীমূর্তি পাওয়া গেছে।
    • হরপ্পা: এখান থেকে R-37 সমাধিক্ষেত্র এবং ছোট শস্যাগার (Granaries) পাওয়া গেছে।
    • লোথাল (গুজরাট): এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বন্দর (Port Town)। এখানে বিশ্বের প্রাচীনতম কৃত্রিম পোতাশ্রয় বা ডকইয়ার্ড (Dockyard) পাওয়া গেছে।
    • কালিবঙ্গান (রাজস্থান): এখানে লাঙল দিয়ে কর্ষিত জমি এবং উটের হাড়ের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
    • ধোলাভিরা (গুজরাট): এখানকার উন্নত জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা (Water Management System) এবং তিনটি অংশে বিভক্ত নগরের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি UNESCO World Heritage Site
    • রাখিগড়ী (হরিয়ানা): এটি ভারতে অবস্থিত হরপ্পা সভ্যতার বৃহত্তম কেন্দ্র

৩. বৈদিক যুগ (Vedic Age): যখন বেদ রচিত হচ্ছিল

সিন্ধু সভ্যতার পতনের পর ভারতে আর্যদের হাত ধরে এক নতুন গ্রামীণ সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এই সময়কার ইতিহাস জানার মূল উৎস হলো চারটি বেদ। এই যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।

ক) ঋকবৈদিক যুগ (Early Vedic Period: 1500-1000 BC)

এই সময়ে আর্যরা মূলত সপ্তসিন্ধু (সাতটি নদী বিধৌত) অঞ্চলে বাস করত। তাদের জীবন ছিল মূলত পশুপালন-ভিত্তিক এবং সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক। এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হলো ঋগ্বেদ

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • চারটি বেদ: ঋগ্বেদ (স্তোত্র), সামবেদ (সঙ্গীত), যজুর্বেদ (যজ্ঞের নিয়ম) এবং অথর্ববেদ (জাদুবিদ্যা ও চিকিৎসা)। ঋগ্বেদ হলো প্রাচীনতম বেদ। সামবেদকে ভারতীয় সঙ্গীতের উৎস বলা হয়।
  • সমাজ: প্রধান রাজনৈতিক একক ছিল 'জন'। শাসনকার্যের জন্য 'সভা' ও 'সমিতি' নামে দুটি সংস্থা ছিল।
  • অর্থনীতি: মূলত পশুপালন-ভিত্তিক। গোরু বা 'গো' ছিল বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ও সম্পদের প্রতীক।
  • দেবদেবী: ইন্দ্র (বৃষ্টি ও যুদ্ধের দেবতা), অগ্নি (আগুনের দেবতা) ও বরুণ (জলের দেবতা) ছিলেন প্রধান।
  • নদীর প্রাচীন নাম: বিতস্তা (ঝিলাম), অশ্বিনী (চেনাব), পরুষ্ণী (রাভী), বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (শতলেজ)।

খ) পরবর্তী বৈদিক যুগ (Later Vedic Period: 1000-600 BC)

এই সময়ে আর্যরা পূর্ব দিকে গাঙ্গেয় উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং কৃষিকাজ তাদের প্রধান জীবিকা হয়ে ওঠে। সমাজেও অনেক পরিবর্তন আসে। বর্ণপ্রথা জটিল ও কঠোর হতে শুরু করে।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • প্রধান পরিবর্তন: লোহার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়, যা কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনে ('শ্যাম অয়স' নামে পরিচিত)।
  • রাজনৈতিক পরিবর্তন: 'জন' থেকে 'জনপদ' বা রাজ্যের ধারণা তৈরি হয়। রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রাজসূয়, অশ্বমেধ যজ্ঞের মতো বড় বড় যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতে থাকে।
  • সমাজ: বর্ণপ্রথা (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) বংশানুক্রমিক ও কঠোর হয়ে ওঠে। 'গোত্র' ধারণার উদ্ভব হয়।
  • সাহিত্য: বেদ ছাড়াও ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ (বেদান্ত) রচিত হয়। 'সত্যমেব জয়তে' কথাটি মুণ্ডক উপনিষদ থেকে নেওয়া হয়েছে।

৪. প্রতিবাদী আন্দোলন: বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম (6th Century BC)

পরবর্তী বৈদিক যুগের জটিল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ব্যয়বহুল যজ্ঞ এবং কঠোর বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে বেশ কিছু নতুন ধর্ম ও দর্শনের জন্ম হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম।

ক) জৈনধর্ম (Jainism)

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • জৈনধর্মে মোট ২৪ জন তীর্থংকর ছিলেন। প্রথম তীর্থংকর: ঋষভনাথ২৩তম তীর্থংকর: পার্শ্বনাথ
  • ২৪তম (শেষ) তীর্থংকর: মহাবীর বা বর্ধমান। তিনি ছিলেন প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।
  • মহাবীরের জন্ম: বিহারের কুন্দগ্রাম (বৈশালীর কাছে)। নির্বাণ (মৃত্যু): পাওয়াপুরী (রাজগৃহের কাছে)।
  • মূলনীতি: জৈনধর্মের মূল ভিত্তি হলো 'অহিংসা'। পঞ্চমহাব্রত (অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, অপরিগ্রহ, ব্রহ্মচর্য) ও ত্রিরত্ন (সঠিক বিশ্বাস, সঠিক জ্ঞান, সঠিক আচরণ) গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভাগ: পরবর্তীকালে জৈনধর্ম শ্বেতাম্বর (শ্বেতবস্ত্রধারী) ও দিগম্বর (বস্ত্রহীন) – এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়।

খ) বৌদ্ধধর্ম (Buddhism)

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • প্রতিষ্ঠাতা: গৌতম বুদ্ধ। তাঁর আসল নাম ছিল সিদ্ধার্থ। তাঁকে 'এশিয়ার আলো' (Light of Asia) বলা হয়।
  • জন্ম: নেপালের লুম্বিনীতে (শাক্য বংশে)।
  • জ্ঞানলাভ (বোধি): বিহারের বোধগয়ায় একটি অশ্বত্থ গাছের নিচে।
  • প্রথম ধর্মপ্রচার (ধর্মচক্র প্রবর্তন): সারনাথে।
  • মহাপরিনির্বাণ (মৃত্যু): কুশিনগরে (মল্লদের রাজ্যে)।
  • মূল শিক্ষা: আর্যসত্য (Four Noble Truths) এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ (Eightfold Path)
  • ধর্মগ্রন্থ: ত্রিপিটক (সুত্ত, বিনয়, অভিধর্ম), পালি ভাষায় রচিত। জাতকের গল্পে বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী আছে।
  • বৌদ্ধ সংগীতি (Buddhist Councils): পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!
    • প্রথম (৪৮৩ BC): স্থান- রাজগৃহ, রাজা- অজাতশত্রু
    • দ্বিতীয় (৩৮৩ BC): স্থান- বৈশালী, রাজা- কালাশোক
    • তৃতীয় (২৫০ BC): স্থান- পাটলিপুত্র, রাজা- অশোক
    • চতুর্থ (৭২ AD): স্থান- কাশ্মীর, রাজা- কণিষ্ক। এই সংগীতিতে বৌদ্ধধর্ম হীনযান ও মহাযান – এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়।

৫. মহাজনপদ ও মগধের উত্থান (600 BC onwards)

বুদ্ধের সময়ে উত্তর ভারতে ছোট ছোট রাজ্য বা জনপদগুলো একত্রিত হয়ে ১৬টি বড় রাজ্যে পরিণত হয়, যেগুলোকে বলা হতো 'ষোড়শ মহাজনপদ'। এদের মধ্যে শক্তি, সম্পদ আর সামরিক ক্ষমতার জোরে বাকিদের হারিয়ে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে উঠে আসে মগধ

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • ষোড়শ মহাজনপদের উল্লেখ: বৌদ্ধগ্রন্থ 'অঙ্গুত্তর নিকায়' এবং জৈনগ্রন্থ 'ভগবতী সূত্র'-এ পাওয়া যায়।
  • সবচেয়ে শক্তিশালী মহাজনপদ: মগধ
  • মগধের প্রধান রাজবংশ:
    • হর্যঙ্ক বংশ: প্রতিষ্ঠাতা বিম্বিসার। রাজধানী ছিল রাজগৃহ। তাঁর পুত্র অজাতশত্রু পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন (পিতৃহন্তা)।
    • শিশুনাগ বংশ: প্রতিষ্ঠাতা শিশুনাগ।
    • নন্দ বংশ: প্রতিষ্ঠাতা মহাপদ্ম নন্দ (তাঁকে 'সর্বক্ষত্রান্তক' বা সকল ক্ষত্রিয়ের নিধনকারী এবং 'দ্বিতীয় পরশুরাম' বলা হয়)। এই বংশের শেষ রাজা ছিলেন ধননন্দ। তাঁর সময়েই গ্রিক বীর আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন (৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)।

৬. মৌর্য সাম্রাজ্য (Maurya Empire: 322-185 BC): ভারতের প্রথম সাম্রাজ্য

ধননন্দের অত্যাচারী শাসনকালে, এক সাধারণ কিন্তু বুদ্ধিমান যুবক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, তাঁর গুরু চাণক্য (কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত)-এর সাহায্যে নন্দ বংশকে উচ্ছেদ করে ভারতের প্রথম অখণ্ড সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • প্রতিষ্ঠাতা: চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য
  • প্রধান সহায়ক: চাণক্য। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থটি হলো 'অর্থশাস্ত্র' (রাষ্ট্রশাসন ও অর্থনীতি বিষয়ক)।
  • গ্রিক দূতঃ চন্দ্রগুপ্তের রাজসভায় গ্রিক শাসক সেলুকাসের দূত মেগাস্থিনিস এসেছিলেন। তাঁর লেখা বইটির নাম 'ইন্ডিকা'
  • অশোক (মহান): মৌর্য বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট। সিংহাসনে বসার পর তিনি কলিঙ্গ যুদ্ধ (২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) করেন। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে তিনি 'ভেরিঘোষ' (যুদ্ধনীতি) ত্যাগ করে 'ধম্মঘোষ' (ধর্মের নীতি) গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন।
  • শিলালিপি: অশোক তাঁর বাণী প্রচারের জন্য শিলালিপি ও স্তম্ভলিপি ব্যবহার করেন। এগুলির ভাষা ছিল মূলত প্রাকৃত এবং লিপি ছিল ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। জেমস প্রিন্সেপ ১৮৩৭ সালে প্রথম অশোকের লিপির পাঠোদ্ধার করেন।
  • শেষ সম্রাট: বৃহদ্রথ। তাঁকে হত্যা করে তাঁর সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

৭. মৌর্য-পরবর্তী যুগ (Post-Mauryan Period): দেশী ও বিদেশী শক্তির সংঘাত

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে আবার ছোট ছোট রাজ্যের উত্থান হয়। এই সময়ে কিছু দেশীয় রাজবংশ এবং মধ্য এশিয়া থেকে আগত কিছু বিদেশি শক্তি শাসন করে।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • শুঙ্গ বংশ: প্রতিষ্ঠাতা পুষ্যমিত্র শুঙ্গ
  • সাতবাহন বংশ: প্রতিষ্ঠাতা সিমুক। শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী। এঁরা দাক্ষিণাত্যে শাসন করতেন।
  • ইন্দো-গ্রিক: রাজা মিনান্দার বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন। 'মিলিন্দপঞহ' গ্রন্থে তাঁর ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নাগসেনের কথোপকথন লিপিবদ্ধ আছে।
  • কুষাণ বংশ: এরা ছিল বিদেশি। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন কণিষ্ক
    • কণিষ্কের রাজধানী ছিল পুরুষপুর (পেশোয়ার)
    • তিনি ৭৮ খ্রিস্টাব্দে 'শকাব্দ' (Saka Era) প্রবর্তন করেন, যা ভারত সরকার এখনও ব্যবহার করে।
    • তাঁর আমলেই কাশ্মীরে চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়।
    • তাঁর সময়ে গান্ধার শিল্পরীতি (গ্রিক-ভারতীয়) ও মথুরা শিল্পরীতির (সম্পূর্ণ ভারতীয়) বিকাশ ঘটে।

৮. গুপ্ত সাম্রাজ্য: ভারতের স্বর্ণযুগ (Gupta Empire: c. 320-550 AD)

রাজনৈতিক অস্থিরতার পর গুপ্তদের হাত ধরে ভারতে আবার এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য – সবকিছুর চরম উৎকর্ষের কারণে এই যুগকে 'ভারতের স্বর্ণযুগ' (Golden Age of India) বলা হয়।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • প্রতিষ্ঠাতা: শ্রীগুপ্ত। প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রথম চন্দ্রগুপ্তকে ধরা হয়, যিনি 'মহারাজাধিরাজ' উপাধি নেন।
  • সমুদ্রগুপ্ত: গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তাঁর সভাকবি হরিষেণ রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি বা প্রয়াগ প্রশস্তি থেকে তাঁর বিজয়গাথা জানা যায়। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁকে 'ভারতের নেপোলিয়ন' বলেছেন।
  • দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত: তিনি 'বিক্রমাদিত্য' উপাধি নেন। তাঁর রাজসভায় নবরত্ন ছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হলেন কালিদাস, আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ধন্বন্তরি। তাঁর সময়েই চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারতে আসেন।
  • কুমারগুপ্ত: তিনি বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
  • স্কন্দগুপ্ত: তিনি দুর্ধর্ষ হূণ আক্রমণ প্রতিহত করে সাম্রাজ্য রক্ষা করেন।
  • বিজ্ঞান ও সাহিত্য:
    • আর্যভট্ট: তিনি বলেন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে এবং শূন্য (0)-এর ধারণা দেন।
    • কালিদাস: 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম', 'মেঘদূতম'-এর মতো কালজয়ী কাব্য ও নাটক রচনা করেন।
    • স্থাপত্য: উত্তরপ্রদেশের দেওগড়ের দশাবতার মন্দির (প্রথম শিখরযুক্ত মন্দির) এই যুগের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।

৯. হর্ষবর্ধনের যুগ (Age of Harshavardhana: 606-647 AD)

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে পুষ্যভূতি বংশের রাজা হর্ষবর্ধন থানেশ্বর ও কনৌজকে কেন্দ্র করে এক শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলেন। তিনিই ছিলেন প্রাচীন ভারতের শেষ মহান হিন্দু সম্রাট।

  • গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-লাইনার:
  • রাজধানী: প্রথমে থানেশ্বর, পরে কনৌজ-এ স্থানান্তরিত করেন।
  • চৈনিক পরিব্রাজক: বিখ্যাত পর্যটক হিউয়েন সাঙ (Xuanzang) হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতে আসেন। তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তের নাম 'সি-ইউ-কি'। তাঁকে 'তীর্থযাত্রীদের রাজকুমার' বলা হয়।
  • সাহিত্য: হর্ষবর্ধন নিজে 'রত্নাবলী', 'নাগানন্দ' ও 'প্রিয়দর্শিকা' নামে তিনটি নাটক রচনা করেন। তাঁর সভাকবি ছিলেন বাণভট্ট, যিনি 'হর্ষচরিত' ও 'কাদম্বরী' রচনা করেন।
  • গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ: হর্ষবর্ধন দাক্ষিণাত্য জয়ের চেষ্টা করলে নর্মদা নদীর তীরে চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে পরাজিত হন। এই তথ্য আইহোল প্রশস্তি থেকে জানা যায়।

১০. প্রাচীন দক্ষিণ ভারতের রাজবংশ (Ancient South Indian Dynasties)

যখন উত্তর ভারতে বড় বড় সাম্রাজ্য শাসন করছিল, তখন দক্ষিণ ভারতেও বেশ কিছু শক্তিশালী রাজবংশের উত্থান ঘটেছিল, যাদের অবদান কোনো অংশে কম নয়।

  • সঙ্গম যুগ (Sangam Age): দক্ষিণ ভারতের একেবারে শুরুর দিকের ইতিহাসে তিনটি প্রধান রাজবংশ শাসন করত - চোল (প্রতীক: বাঘ), চের (প্রতীক: ধনুক) এবং পান্ড্য (প্রতীক: মাছ)।
  • চালুক্য বংশ (বাদামি/বাতাপি):
    • শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন দ্বিতীয় পুলকেশী। তিনি হর্ষবর্ধনকে পরাজিত করেন।
    • তাঁর সভাকবি রবিকীর্তি রচিত আইহোল প্রশস্তি চালুক্যদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
  • পল্লব বংশ:
    • এদের রাজধানী ছিল কাঞ্চি
    • শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন প্রথম নরসিংহবর্মণ। তিনি দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাজিত করে 'বাতাপিকোণ্ড' উপাধি নেন।
    • মহাবলীপুরমের রথ মন্দির এবং শোর টেম্পল পল্লব স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।

প্রাচীন ভারতের মুদ্রা: ইতিহাসের নীরব সাক্ষী (Coins in Ancient India)

মুদ্রা বা Coin হলো ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। এক একটি ছোট মুদ্রা নিজের বুকে লুকিয়ে রাখে একটি গোটা যুগের গল্প। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানতে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান হিসেবে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম। মুদ্রার অধ্যয়ন বা পড়াশোনাকে Numismatics (মুদ্রাবিদ্যা) বলা হয়, যা থেকে পরীক্ষাতে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। মুদ্রা থেকে শুধু অর্থনৈতিক অবস্থাই নয়, তৎকালীন সময়ের রাজা, ধর্ম, শিল্পকলা, বাণিজ্য এবং বৈদেশিক সম্পর্ক সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা যায়।

চলুন, প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, যা আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরও মজবুত করবে।

১. সর্বপ্রথম মুদ্রা: আহত মুদ্রা বা ছাপযুক্ত মুদ্রা (Punch-marked Coins)

এগুলিই হলো ভারতে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন মুদ্রা। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতক নাগাদ, অর্থাৎ মহাজনপদের সময়কালে এই মুদ্রাগুলোর প্রচলন শুরু হয়।

  • বৈশিষ্ট্য: এই মুদ্রাগুলোর কোনো নির্দিষ্ট আকার ছিল না এবং এগুলি মূলত রূপা (Silver) দিয়ে তৈরি হতো। এগুলোর উপর বিভিন্ন চিহ্ন বা প্রতীক (যেমন - জ্যামিতিক নকশা, সূর্য, পাহাড়, গাছ, পশু) দিয়ে আঘাত বা ছাপ (Punch) দেওয়া হতো।
  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: এদের উপর কোনো রাজার নাম, তারিখ বা কোনো লেখা থাকত না। প্রাথমিকভাবে বণিকদের সংঘ বা গিল্ড (Guilds) এবং পরবর্তীকালে শাসকরা এই মুদ্রা জারি করত। মৌর্য যুগেও এই মুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ছিল।

২. ইন্দো-গ্রিক মুদ্রা: এক নতুন দিগন্ত

ভারতে প্রথম সুন্দর ও সুগঠিত মুদ্রা চালু করার কৃতিত্ব ইন্দো-গ্রিক শাসকদের। এরাই প্রথম মুদ্রার ইতিহাসে একটি বিপ্লব নিয়ে আসে।

  • বৈশিষ্ট্য: এরাই সর্বপ্রথম মুদ্রার উপর রাজার প্রতিকৃতি (Portrait of the King) এবং নাম খোদাই করা শুরু করে। এর ফলে কোন রাজার আমলে কোন মুদ্রা চালু ছিল, তা স্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়।
  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: এই মুদ্রাগুলো থেকে প্রায় ৩০ জন ইন্দো-গ্রিক শাসকের ব্যাপারে জানা গেছে, যাদের সম্পর্কে অন্য কোনো ঐতিহাসিক উৎস প্রায় নেই বললেই চলে। এরাই প্রথম ভারতে স্বর্ণমুদ্রা (Gold Coins) চালু করে, যদিও তা ছিল সীমিত পরিমাণে।

৩. কুষাণ মুদ্রা: স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ও শুদ্ধতা

কুষাণ যুগ ভারতীয় মুদ্রার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ও শুদ্ধতার জন্য এই যুগ বিখ্যাত।

  • বৈশিষ্ট্য: কুষাণরাই ভারতে প্রথম ব্যাপকভাবে স্বর্ণমুদ্রা জারি করে। এই মুদ্রাগুলো রোমান মুদ্রার অনুকরণে তৈরি হতো এবং এদের মান ও বিশুদ্ধতা ছিল অত্যন্ত উন্নত।
  • রাজা কণিষ্কের মুদ্রা: কণিষ্কের মুদ্রায় একদিকে রাজার প্রতিকৃতি এবং অন্যদিকে বিভিন্ন ভারতীয় (শিব, বুদ্ধ), গ্রিক ও ইরানি দেবতার মূর্তি খোদাই করা থাকত। এটি তাদের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পরিচয় দেয়।
  • বিম কদফিসেস (Vima Kadphises): কুষাণ সম্রাট বিম কদফিসেস ভারতে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন শুরু করেন বলে মনে করা হয়। তাঁর মুদ্রায় শিব ও নন্দীর ছবি পাওয়া যায়।
  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: কুষাণদের স্বর্ণমুদ্রা তৎকালীন সমৃদ্ধ অর্থনীতি এবং রোমের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।

৪. সাতবাহন মুদ্রা: সীসার ব্যবহার ও সামুদ্রিক বাণিজ্য

দাক্ষিণাত্যের সাতবাহন শাসকরা মুদ্রার উপাদানের ক্ষেত্রে একটি নতুনত্ব নিয়ে আসে।

  • বৈশিষ্ট্য: সাতবাহনরা মূলত সীসা (Lead) এবং পোটিন (এক প্রকার সংকর ধাতু) দিয়ে মুদ্রা তৈরি করত, যা ভারতের ইতিহাসে বিরল।
  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: তাদের কিছু মুদ্রায় দুই মাস্তুলযুক্ত জাহাজের ছবি (Image of two-masted Ships) পাওয়া যায়, যা তাদের শক্তিশালী নৌ-বাণিজ্য এবং সামুদ্রিক কার্যকলাপের প্রমাণ দেয়। এই মুদ্রাগুলি রাজা যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণীর আমলে জারি হয়েছিল।

৫. গুপ্ত মুদ্রা: মুদ্রাশিল্পের স্বর্ণযুগ

গুপ্ত যুগকে যেমন 'ভারতের স্বর্ণযুগ' বলা হয়, তেমনই এই সময়কার মুদ্রাকেও 'মুদ্রাশিল্পের স্বর্ণযুগ' বলা হয়। গুপ্ত শাসকরাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্বর্ণমুদ্রা জারি করেন।

  • বৈশিষ্ট্য: গুপ্তদের স্বর্ণমুদ্রা 'দিনার' (Dinars) নামে পরিচিত ছিল। এই মুদ্রাগুলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যম ছিল না, এগুলি ছিল অসাধারণ শিল্পকর্ম। গুপ্তমুদ্রায় রাজার উপাধি ও শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন দেখা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা:
    • সমুদ্রগুপ্ত: তাঁর মুদ্রায় তাঁকে বীণা বাদনরত অবস্থায় দেখা যায়, যা তাঁর সঙ্গীতপ্রেমের পরিচয় দেয়। এছাড়াও অশ্বমেধ যজ্ঞের ছবিযুক্ত (Ashvamedha type) মুদ্রাও তিনি চালু করেন।
    • দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (বিক্রমাদিত্য): তাঁর মুদ্রায় তাঁকে সিংহ শিকার করতে দেখা যায় (Lion-slayer type)। তিনি শকদের পরাজিত করে পশ্চিম ভারতে প্রথম রৌপ্যমুদ্রা (Silver Coins) চালু করেন।
    • কুমারগুপ্ত: তাঁর মুদ্রায় তাঁকে ময়ূরের উপর আসীন কার্তিকের (Kartikeya type) ছবি দেখা যায়। তিনিই সবচেয়ে বেশি প্রকারের মুদ্রা চালু করেন।
  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: স্কন্দগুপ্তের সময় থেকে স্বর্ণমুদ্রায় সোনার পরিমাণ কমতে শুরু করে এবং ভেজাল দেখা যায়, যা গুপ্ত সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক অবনতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।

৬. কড়ি (Cowrie Shells): সাধারণ মানুষের মুদ্রা

বড় বড় সাম্রাজ্যের স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার পাশাপাশি, প্রাচীন ভারতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্য কড়ি-র ব্যাপক প্রচলন ছিল। চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েনের বিবরণ থেকে জানা যায় যে গুপ্ত যুগে সাধারণ মানুষ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কড়ি ব্যবহার করত।


পরীক্ষার জন্য সেরা ওয়ান-লাইনার (মুদ্রা)

  • মুদ্রার অধ্যয়নকে কী বলা হয়? – Numismatics (মুদ্রাবিদ্যা)
  • ভারতের প্রাচীনতম মুদ্রা কোনটি? – আহত মুদ্রা বা Punch-marked Coins
  • ভারতে প্রথম রাজার ছবি ও নামসহ মুদ্রা কারা চালু করে? – ইন্দো-গ্রিক শাসকরা
  • ভারতে প্রথম (সীমিত পরিমাণে) স্বর্ণমুদ্রা কারা চালু করে? – ইন্দো-গ্রিকরা
  • কারা প্রথম ব্যাপকভাবে এবং বিশুদ্ধ স্বর্ণমুদ্রা চালু করে? – কুষাণরা
  • কারা প্রথম সীসার মুদ্রা চালু করে? – সাতবাহনরা
  • কোন রাজার মুদ্রায় জাহাজের ছবি পাওয়া যায়? – সাতবাহন রাজা যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী
  • সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্বর্ণমুদ্রা কোন যুগে জারি করা হয়? – গুপ্ত যুগে
  • গুপ্ত যুগের স্বর্ণমুদ্রা কী নামে পরিচিত ছিল? – দিনার
  • কোন গুপ্ত সম্রাটকে তাঁর মুদ্রায় বীণা বাজাতে দেখা যায়? – সমুদ্রগুপ্ত
  • কোন গুপ্ত শাসক প্রথম রৌপ্যমুদ্রা চালু করেন? – দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
  • সাধারণ মানুষের বিনিময়ের মাধ্যম কী ছিল? - কড়ি (Cowrie Shells)

বন্ধুরা, হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর সঙ্গেই প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। এরপর ভারতে শুরু হয় মধ্যযুগ, যা নিয়ে আমরা অন্য কোনো পোস্টে আলোচনা করব। আশা করি, গল্পের মতো করে সাজানো এই বিস্তারিত পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ১০০ শতাংশ সাহায্য করবে। পোস্টটি কেমন লাগল এবং আর কোন বিষয়ে এমন পোস্ট চান, তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন!

Bigyanbook

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook whatsapp email

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন